সাপও বেজির লড়াইয়ে সাপ শরীরের শক্তিতে না পারায় বেজি কে লেজ দিয়ে ধরে বিষ খাইয়ে পরাস্ত করল। এমনি এক অদ্ভুত ভিডিও নেটজুড়ে ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদন: সে এক মজার লড়াই। দেখতে হয় কিছুটা দূরে থেকে। কেউ কাউকে হারাতে রাজি নয়। যত কৌশল আছে সবই প্রয়োগ। এর সঙ্গে যোগ হয় শক্তি। দর্শকরা মহাখুশি। বড় কারণ সাপ কীভাবে পরাভূত হয় বেজির কাছে তা দেখে। আরও খুশি হয় বেজির হাতে সাপের মরণ দেখলে। প্রকৃতিতে সাপ আর বেজি চিরদিনের শত্রু। মানুষেরও বড় শত্রু সাপ।

বেজি দেখলে মারার জন্য কেউ এগিয়ে যায় না। আর সাপ দেখলে কোন কথা নেই- আগে পিটিয়ে মারা। তারপর অন্য কথা। বেজি ও সাপ এই দুই শত্রু বিশ্বজুড়ে ‘ওয়াইল্ড লাইফ’ ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। এই দুই প্রাণীকে পরিবেশবিদরা বধ করে না। তবে এদের খেলা দেখে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাপ-বেজির খেলা মানুষের চিত্ত বিনোদনে বড় ভূমিকা রাখছে। খেলার বৃত্তে এ এক লড়াই।

এবারের বৈশাখী উৎসবে বেদেরা সাপ ও বেজি নিয়ে খেলা দেখায় বিভিন্ন মেলায়। প্রবাদে আছে, সাপে-নেউলে সম্পর্ক। নেউলে অর্থ বেজি। বেদেরা যখন সাপ-বেজির খেলা বা লড়াই দেখায় তখন তাদেরও সতর্ক থাকতে হয়। বেদেদের জীবনে সাপ নিয়ে বসবাস। কেউ সাপ খেলা দেখায়। কেউ দেখায় সাপ-বেজির খেলা। আসলে এটাকে খেলা বলা যায় না। সাপ বেজির লড়াই। যা দিনে দিনে মানুষের মুখে খেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বেদেরাও তাই খেলা বলে। যেন বন্যপ্রাণীর যুদ্ধ খেলা। বিশ্বে শক্তি দেখাতে যেমন যুদ্ধ হয়, প্রাণিকুলেও তেমন যুদ্ধ আছে। বগুড়া এ্যাডওয়ার্ড পার্কে অনুষ্ঠিত এবারের বৈশাখী মেলায় দর্শকদের আনন্দ দিতে আয়োজক বগুড়া থিয়েটার সাপ-বেজির খেলা দেখাবার আমন্ত্রণ জানায় বেদেদের। গাজীপুর থেকে আসেন বেদে মাখন (২৬)। তার বাড়ি গাজীপুরের জয়নগর গ্রামে। প্রায় দশ বছর ধরে সাপ-বেজির খেলা দেখান বিভিন্ন মেলায়। তার সঙ্গে আরও বেদে আসে।

বেদেরা বহর নিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেদেরা যেমন সাপ পোষে তেমন বেজিও পোষে। তিনি বললেন, বেজি পোষ মানে সহজে। সাপ ততটা নয়। কথায় আছে, দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলে ছোবল দেবে। সুযোগ পেলেই বিষাক্ত সাপ দংশন করে। মাখন বেদেকে কোন সাপ দংশন করেনি। এই বেদেকে খেলা শিখিয়েছেন তার ওস্তাদ। তিনি অনেক কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। বললেন বেজিকে লালন-পালন করতেও দুধ-কলা খাওয়াতে হয়।

মাছের কাঁটা বেজির পছন্দ। বেজিকে সাপের সঙ্গে লড়াই শেখাতে হয় না। সাপ দেখলেই বেজি তেড়ে যায়। সাপও ফণা তোলে। বেজিও সাপকে লক্ষ্য করে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাপ লেজ দিয়ে বেজিকে আঘাত করে থাবা থেকে রক্ষা করে। বেজিও কম যায় না। বেজির লক্ষ্য থাকে সাপের মাথার দিকে। কোনভাবে সাপের মাথা মটকে কামড় দিতে পারলে রক্ষা নেই। সাপ না মরা পর্যন্ত বেজি সাপকে ছাড়ে না। একপর্যায়ে সাপ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মরেও যায়।

সাপের মরণ দেখে আনন্দ পায় দর্শকরা। বেদে মাখন বললেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গলে ঘুরে সাপ সংগ্রহ করেন। অনেক জাতের সাপ মেলে। গোখরা গোমা কেউটে কালকেউটে সাপও মেলে। তাদের খাঁচায় ভরে রাখতে কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। এখন বন-জঙ্গল কমে গেছে। গ্রামের কোন বাড়িতে সাপ আছে এমন খবর দিলে তারা গিয়ে গর্ত থেকে সংগ্রহ করেন। খেলা দেখাবার জন্য বেশিরভাগ সময়ই দারাজ সাপ দিয়েই খেলা দেখান। এই সাপের দাম কম।

সহজে মেলে। একেকটি দারাজ সাপের দাম পড়ে ২০০ টাকা। বেজি মেরে ফেলে দিলে ফের সাপ সংগ্রহ করতে হয়। বেজির সামনে বিষাক্ত সাপ দিয়ে তারা সাধারণত খেলা দেখায় না। রিস্ক হয়। এই সাপের দামও বেশি। সহজে ধরা যায় না। কখনও বিষাক্ত সাপ দিয়ে বেজির লড়াইয়ের আগে বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে হয়। তা না হলে বিষদাঁত দিয়ে বেজির শরীরে বিষ ঢেলে দিতে পারে। মঞ্চে খেলা দেখানো বা লড়াইয়ের সময় বেজিকে কায়দা করে বেঁধে রাখতে হয়।

তা না হলে বেজি দৌড়ে পালায়। সাপকে ঘায়েল না করা পর্যন্ত মঞ্চে খেলা চলে। বেদেদের মধ্যে কেউ শুধু সাপ খেলা দেখায়। এই সংখ্যাই বেশি। সাপ-বেজির খেলা দেখানোর বেদের সংখ্যা কম। সাপ-বেজির খেলা দেখিয়েই চলে বেদেদের সংসার। সাপকে বেজির মুখোমুখি করে দেয়াও একটা শিল্প। এমন শিল্পকর্ম উপমহাদেশে বেদেদের মধ্যেই বহুকাল ধরে প্রচলিত। কালের এই ঐতিহ্য এখন যোগ হয়েছে বাংলার বৈশাখী উৎসবে। সাপ-বেজির খেলা বিনোদন ধরে রেখেছে। আগে যা ছিল গ্রামীণ বর্তমানে তা নগরীতে প্রবেশ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *