সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে ১০ গুণ দ্রুত, মহাপ্রলয়ের মুখে শহর কলকাতা –

পরিবেশবিদেরা জানান, শুধু মৌসুনি নয়, ওই এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ঘোড়ামারা, জম্বুদ্বীপ, নয়াচরের মতো বিভিন্ন দ্বীপ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিপদের আশঙ্কা আছে সাগরদ্বীপেও। পরিবেশবিদেরা জানান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষের বাস। রয়েছে বিপন্ন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আয়লার দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন। ফের কোনও বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে কী অবস্থা হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন অনেক পরিবেশবিজ্ঞানী।

ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে ২০০৫ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবারে সমুদ্রের জলস্তর বছরে গড়ে ৫.১৬ মিলিমিটার করে বাড়ছে। গত ৪০-৫০ বছরে দেশে সমুদ্রের জলস্তরের সার্বিক গড় বৃদ্ধির বার্ষিক পরিমাণ ১.৩ মিলিমিটার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই বৃদ্ধির কথা বলছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে তা মানল।’’ তাঁর বক্তব্য, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে দেখা যাবে, এই বৃদ্ধির পরিমাণ বছরে প্রায় ১২ মিলিমিটার!

সমুদ্রবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাগরের জলস্তর যে বাড়বে, তা বলাই হয়েছে। সে-কথা বলা হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীন সংস্থা ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ বা আইপিসিসি-র রিপোর্টেও। সমুদ্রবিজ্ঞানী অভিজিৎ মিত্রের মতে, বঙ্গে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধির কারণ শুধু বিশ্ব উষ্ণায়ন নয়।

তাঁর ব্যাখ্যা, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য সাগরের জলস্তর তো বাড়ছেই। তার উপরে নির্বিচারে পলি ও বালি তোলা হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায়। তার ফলে তলদেশ বসে যাচ্ছে। ফলে দু’দিক থেকেই বিপদ ঘনিয়ে আসছে। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আন্দামান ও অন্ধ্রপ্রদেশে পলি নেই। তাই সেখানে জলস্তর বৃদ্ধির কারণ শুধু বিশ্ব উষ্ণায়নই।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরী বলছেন, এই জলস্তর বাড়তে থাকলে নদীর জলের লবণত্ব বা নোনতা ভাব বৃদ্ধি পাবে। তার ফলে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিন্যাস যাবে বদলে। শুধু তা-ই নয়, আগামী দিনে এই বিপদ আরও উত্তরে (কলকাতার দিকে) এগিয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *