নিজস্ব প্রতিবেদন: ‘’কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেকগুলো ক্ষতিকর উপাদান যেমন হাইড্রো কার্বন, কাবন মনোঅক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলো প্রত্যেকটাই খুব ক্ষতিকর।রাস্তা দিয়ে হাঁটলে, প্রতি মুর্হূতে দেখা যাবে অনেক গাড়ি আছে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে চলছে।
হয়তো ধোঁয়ার কুণ্ডলির ফাঁদে পড়ে গেছেন, কালো ধোঁয়া নাকমুখ দিয়ে প্রবেশ করছে। এসব বাস, ট্যাক্সি কিংবা টেম্পোতে চড়লে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে চোখ জ্বালা করছে, বমিভাব হচ্ছে বা মাথা ধরেছে। বাসে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনটা মুক্ত বাতাসের জন্য ছটফট করবে। এমনভাবে অসংখ্য নাগরিক কালো ধোঁয়ার শিকার হচ্ছেন। গাড়ির কালো ধোঁয়া বের হয় সাধারণ জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহন থেকে।
বিশেষ করে গাড়ির ইঞ্জিন পুরনো হলে জ্বালানি সম্পূর্ণ দহন করতে পারে না বলে আগে সে সব গ্যাস বের হয়ে বাতাসে মিশে যায়। গাড়ি চলার সময় যাত্রীরা গ্যাসের গন্ধ পান। যানবাহন থেকে শতকরা ৮০ ভাগ কার্বন মনোঅক্সাইড বাতাসে মেশে। ট্যাক্সি, টেম্পোসহ অনেক বাস আছে যা পেট্রলের সঙ্গে মবিল মিশিয়ে চালানো হয় খরচ কমে বলে। তাতে করে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়;
সেই ধোঁয়ায় কোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ না হয়ে পারে না। কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন উপাদান যেমন কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করে, রক্তের লোহিত কণিকা হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশে কার্বন ফ্রি হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। ফলে হিমোগ্লোবিনে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পরিশেষে, এই নীরব ঘাতক কালো ধোঁয়া রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো ধোঁয়া নির্গত হলে তা ২০০ টাকা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধোঁয়ার ফলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর।গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা যায়, যানবাহনের মধ্যে বাস থেকে কালো ধোঁয়া বেশি নির্গত হয়।
এর মধ্যে পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড় বাস থেকে হয় বেশি। মিরপুর রোডে চলাচলকারী বিকাশ, ভিআইপি, বাহনসহ বেশ কিছু বাসে এ অবস্থা দেখা যায়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সোমবার বিকাশ পরিবহনের চালককে ধোঁয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘এগুলা মালিকে জানে। আমার কাজ বাস চালানো।’বাস ছাড়া লেগুনা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাসও এ তালিকায় আছে।
সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার এলাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে মতিঝিলগামী নিউ ভিশন, দিশারি, বিকল্পসহ অনেক বাস থেকেই কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। সার্ক ফোয়ারা মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষারত নুসরাত সাদিয়া মুখে মাস্ক পরে কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছেন। ধোঁয়ার কথা বলতেই বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘এমনিতেই ঢাকার বাতাস খুব খারাপ।
এর ওপর প্রতিদিন এই ধোঁয়া খেতে হচ্ছে। ইনহেলার সব সময় সঙ্গে রাখি। অ্যাজমা নিয়ে এই শহরে থাকা কঠিন।’জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিকর এই কালো ধোঁয়ার কারণে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর।জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব গাড়ির পেট্রোলিয়াম আংশিক জ্বলে।
ফলে বাতাসে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়। মূলত সিসা-জাতীয় পদার্থ, যেটা শ্বাসতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।’তিনি আরও বলেন, এ ধোঁয়ার প্রভাব সরাসরি শিশুদের ওপর পড়ে। মানসিক বিকাশে সমস্যা হয়। এ ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইডও ছড়ায়। এতে অ্যাজমা হতে পারে এবং ফুসফুসের ক্ষতি করে।
তিনি আরও যোগ করেন, রাস্তায় যাদের দীর্ঘ সময় থাকা হয় অর্থাৎ ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহনশ্রমিক ও রাস্তার পাশের দোকানি, তাঁদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।