নিজস্ব প্রতিবেদন:পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অবশ্য এটিকে চিহ্নিত করেন সোনালী মুরগী নামে, যেটি মাংসের বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এরই মধ্যে দখল করেছে এবং প্রতিযোগিতায় ব্রয়লার মুরগীর বেশ কাছে চলে এসেছে।পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহাম্মদ মহসীন মনে করেন যে দু’টো কারণে বাংলাদেশে মুরগীর মাংসের বাজারে এই পরিবর্তনটি ঘটছে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, মাংসের বৈশিষ্ট্যের কারণে যেমন একদিকে সোনালী মুরগীর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, তেমনই অন্যদিকে খামারীদের মধ্যে ব্রয়লার মুরগী দ্রুত বিক্রি করে দেয়ার একটি প্রবণতার কারণে সেটির চাহিদার প্রবৃদ্ধি আর আগের মত নেই।
তিনি বলেন, সোনালী মুরগীর মাংস একটু শক্ত হয় এবং এর স্বাদটিও বেশ ভালো।
আর ব্রয়লার মুরগীর বয়স অন্তত ছয় সপ্তাহ পুরো না হলে এগুলোর মাংসের স্বাদ ভালো হয় না, কিন্তু অনেকেই দ্রুত এগুলোকে বাজারে পাঠান লাভের আশায়।”ফলে বাজারে ব্রয়লারের চেয়ে সোনালীর অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে।খামার মালিক সংগঠনের হিসেবে, বাংলাদেশে এখন প্রতি সপ্তাহে উৎপাদন ও বিক্রি হচ্ছে প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ ব্রয়লার মুরগী।
আর এর বিপরীতে প্রায় ৮৫ লাখ সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে।”মাত্র কয়েক বছরেই সোনালী মুরগী এই অবস্থায় এসেছে,” জানাচ্ছিলেন মিস্টার মহসীন।প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের মতে, সোনালী মুরগী বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অভিযোজনশীল একটি জাত, যার ফলে এ মুরগীর রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়।
খামারীদের মতে, সোনালী মুরগী দু’মাস বয়সেই প্রায় সাতশো’ গ্রাম বা তার চেয়েও বেশি ওজনের হয়ে থাকে, আর বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে ৭/৮শো’ গ্রাম ওজনের মুরগীর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।এছাড়া, স্বাদের কারণে বিয়েশাদী-সহ নানা অনুষ্ঠান-পার্বনেও এখন সোনালী মুরগীই বেশি ব্যবহার হচ্ছে,” বলছিলেন খন্দকার মহসীন।বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ এবং পোলট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ
এই দুটো সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২রা ফেব্রুয়ারি পাইকারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগীর মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০৮ টাকা দরে, আর সোনালী মুরগী বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ১৯০ টাকা দরে।ঢাকার কারওয়ানবাজারের মুরগী ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া জানান, ব্রয়লার মুরগী দিয়ে রোস্ট করা যায় না, ফলে সব ধরণের অনুষ্ঠানের রান্নায় সোনালী মুরগীই বেশি ব্যবহার করা হয়।”সোনালীর স্বাদ দেশী মুরগীর মতোই,”বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বাবুল মিয়া।
তিনি আরও জানালেন যে দাম কম হওয়ায় ব্রয়লারের মার্কেটও অনেক বড়, অর্থাৎ এটিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। “বলতে পারেন খুচরা বিক্রিতে সমানে সমান অবস্থায় আছে।পাবনায় সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মোহম্মদ আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন যে বাংলাদেশে প্রচলিত দেশী মুরগীর উৎপাদন কমে যাওয়ায় সোনালী জাতের মুরগীর চাহিদা বাড়ছে, কারণ এটি এদেশের আবহাওয়ায় সহজেই লালন-পালন করা যায়।
সোনালী এক সময় খামার করেই শুরু হয়েছিলো কিন্তু মানুষ এখন ব্যক্তিগতভাবেই উৎপাদন করছে,” বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন তিনি।তিনি বলেন, দুই মাসেই সোনালী মুরগীর ওজন আটশো’ গ্রামের মতো হয় বলে বিক্রি বেশ ভালো হয়। অন্যদিকে, নরম মাংসের ব্রয়লার মুরগীর দাম কম বলে নিম্নবিত্তের মানুষের মধ্যে এর ব্যাপক চাহিদা আছে।