ফাস হলো পেয়ারার ডাল থেকে চারা উৎপন্ন করার গোপন টিপস! এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করলে চারা গাছেই ধরবে পেয়ারা। ফলন ও হবে ভালো। রইল স্টেপ বাই স্টেপ পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদন:পেয়ারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল। বাংলাদেশের সর্বত্রই কম বেশি এ ফল জন্মে থাকে। প্রাথমিকভাবে পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষাবাদ পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসব জেলায় কিছু কিছু এলাকায় চাষ হয়। বর্তমানে পেয়ারার কতগুলো উন্নতজাত ও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

এখন সারা দেশেই এ ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। বহুবিধ গুণাগুণের সমন্বয়ের জন্য পেয়ারাকে নিরক্ষীয় এলাকার আপেল বলা হয়। মুচমুচ করে টাটকা পেয়ারা খাওয়ার মজাই অন্যরকম। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জ্যাম, জেলি, জুস এসব তৈরি করেও পেয়ারা খাওয়া যায়।পেঁয়ারা খেতে খুবই সুস্বাদু, মুচমুচে ও সুমিষ্ট। পেঁয়ারাকে ভিটামিন সি এর ব্যাংক বলা যায়। পেঁয়ারা গাছ মাঝারি আকারের শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট আকৃতির হয়ে থাকে।

শীতের সময় পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শেষের দিকে পেঁয়ারা গাছে নতুন পাতা ও ডগা আসে। সাধারণত বর্ষা ও শীত ঋতুতে গাছে পেঁয়ারা হয়।তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয় ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তাছাড়া জলীয়ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে দাম থাকে কম।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে সকল জাতের পেঁয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে।ফলের আকৃতি এবং রঙ সবদিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেঁয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কীভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যাধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। অত্যন্ত আশার কথা যে, গবেষকরা আজ এ ব্যাপারে সার্থক হয়েছেন।

পেঁয়ারা গাছে অসময়ে ফলধারণ এখন খুব সহজেই সম্ভব হয়।বর্তমানে পেঁয়ারা গাছে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীগণ বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো হলো শিকড় উন্মুক্তকরণ পদ্ধতি, হরমোন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ পদ্ধতি ও শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি।পেঁয়ারা গাছের গোড়ার মাটি তুলে বা আলগা করে দিতে হবে। মাটি তুলে দিয়ে গাছের শিকড়গুলো বের করে নাড়া চাড়া দিয়ে দিতে হবে।

গাছের গোড়া থেকে ০১ থেকে ১.৫ মিটার (পেঁয়ারা গাছের ক্যানপি) পর্যন্ত মাটি কোদাল, শাবল বা নিড়ানি দ্বারা খুব ভালোভাবে সাবধানতার সাথে মাটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে।মাটি তুলে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, গাছের শিকড়গুলো কেটে না যায়। বিশেষ করে গাছের আসল মূল (টেপ রুট) কাটা ও উৎপাটন করা যাবে না। গাছ নাড়ানো যাবে না। সাধারণত যে কোন বয়সের পেঁয়ারা গাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়।

গোড়ার মাটি উন্মুক্ত করার কমপক্ষে ১০-১৫ দিন পর পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যাকালে পরিমাণমত সার ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।এ পদ্ধতিতে গাছের পাতা লাল হয়ে ঝড়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে এপ্রিল-মে মাসে পেঁয়ারা গাছে শিকড় উন্মুক্ত করতে হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পেঁয়ারা গাছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফলধারণ করে।সাধারণত ২-৫ বছর বিশিষ্ট পেঁয়ারা গাছে হরমোন প্রয়োগ করতে হয়।

এপ্রিল-মে মাসে হরমোন প্রয়োগ করার উৎকৃষ্ট সময়। এই সময়ে হরমোন জাতীয় পদার্থ হিসেবে ২,৪-ডি; ন্যাপথালিন এসিটিক এসিড (এনএএ), ১০% ইউরিয়ার দ্রবণ এসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। স্প্রে মেশিন বা ফুট পাম্প দিয়ে খুব ভালো করে পেঁয়ারা গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই গাছের পাতা লালচে হয়ে ঝড়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে গাছে সঠিক পরিচর্যা নিলে নতুন পাতা জন্মাবে এবং অসময়ে ফলধারণ হবে।

শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি। পেঁয়ারার ডাল বাঁকালেই প্রায় দশগুণ বেশি ফলন হয়। তাছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বার মাসই ফল ধরানো সম্ভব হয়। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে আট থেকে দশগুণ ফল ধরবে গাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *