পড়ে থাকা পুকুরে ব্যাঙের বাচ্চা চাষ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেন যুবক! ব্যাঙের চাষ করা থেকে ব্যাঙের মাংস প্রক্রিয়াকরণ একাই সামলাচ্ছে। ভাগ্য পাল্টে গেল যুবকের। তুমুল ভাইরাল ভিডিও

নিজস্ব প্রতিবেদন:বিশ্ব বাজারে ব্যাঙের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।ব্যাঙের ব্যবসা ‘ঝুঁকিমুক্ত’ উল্লেখ করে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড.শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ বলেন,ব্যবসায়ীরা যদি আজকে বিনিয়োগ করে কালকেই মুনাফা চায় তাহলে এ ব্যবসায় সুবিধা করতে পারবে না।

বেশি পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে।তেমন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে দেশে ইতোমধ্যে গড়ে ওঠা দুইটি ব্যাঙের খামারের একটি ময়মনসিংহে ভালুকা উপজেলার উথুরায়। ২০০৪ সালে ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ নামের এ ব্যতিক্রমী খামারের যাত্রা শুরু। ১৫ একর জায়গা জুড়ে বাণিজ্যিক খামারটি গড়েন ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ ও মেজবাউল হক।২০১০ সালে জার্মানিতে হিমায়িত ৬৯টি ব্যাঙের বিক্রির মধ্য দিয়ে রপ্তানির খাতা খোলেন তারা।

এছাড়া গত বছর পর্যন্ত জাপানে এক হাজার ৫০৭টি ব্যাঙের চামড়া রপ্তানি করা এ খামারের কর্তৃপক্ষ বলছে, দু-এক বছরের মধ্যে প্রতি বছর ব্যাঙের এক হাজার চামড়াসহ মাংস রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তারা।বিশ্ববাজারে প্রতিটি ব্যাঙের চামড়া ৫ থেকে ৬শ ডলার মূল্যে রপ্তানি হয়ে থাকে।এ খামারের শুরুর গল্পটা বলেন রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ।

২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে ১৫টি পুরুষ ব্যাঙের সহ ৭৫টি ব্যাঙের আনা হয়। যার জন্য তাদের ব্যয় হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকা।বিশেষ ধরণের পুকুরে দেশীয় আবহাওয়ায় লালন-পালন করে থাকেন তারা। তবে প্রথম দিকে আবহাওয়া ও পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পেরে ৫ থেকে ৭টি ব্রিডার ব্যাঙের মারা যায়।তারপরও বাকি ব্যাঙের বংশ বৃদ্ধি করে সফলতা পান তারা।

বর্তমানে এ খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ব্যাঙের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।তিনি জানান, প্রথম দিকে এসব ব্যাঙের বাঁচিয়ে রাখা, ডিম পাড়ানো, ডিম সংরক্ষণ এবং বাচ্চা ফোটানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশয় দেখা দিলেও অল্পদিনেই বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে ওঠে ব্যাঙের গুলো। পরে ব্যাঙের গুলো ডিম দিতে শুরু করে। তা থেকে বাচ্চা ফোটানোও শুরু হয়।

বাণিজ্যিক ভাবে সাধারণত লোনা পানির প্রজাতির ব্যাঙের চাষ করা হয়। ২ থেকে ৩ মাস বয়সে এসব ব্যাঙের ডিম পাড়া শুরু করে। বছরে একবার বর্ষাকালে গড়ে ৪৫ থেকে ৬০টি ডিম দেয় ব্যাঙের। এসব ডিমের ৮০ শতাংশ থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়।এ প্রজাতির ব্যাঙের সাধারণত ঘাস, লতাপাতা জড়ো করে বাসা তৈরি করে ডাঙ্গায় ডিম দেয়। ব্যাঙের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ৩০থেকে ৩৫ দিন লাগে।

এক জোড়া ব্যাঙের জন্য সাধারণত ৩৫ বর্গ মিটার জায়গা লাগে।বিভাগীয় বন কর্মকর্তা একেএম রুহুল আমিন বলেন, দেশে ব্যাঙের চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার ব্যাঙের চাষিদের নানাভাবে উৎসাহিত করছে।“কেউ শর্ত মেনে আবেদন করলে পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হবে।অন্য ব্যবসার তুলনায় ব্যাঙের চাষের ভিন্নতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে পুঁজি বেশি লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে এ ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম।

আন্তার্জাতিক বাজারে চামড়ার কদর থাকায় প্রতি বছরেই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে খামারিরা চামড়া রপ্তানি করছে। ভবিষ্যতে ব্যাঙের মাংসও রপ্তানি হবে বলে আশা এ বন কর্মকর্তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *