নিজেই নিজেকে বিয়ে করবেন তরুণী! তুমুল ভাইরাল নেটপাড়ায়

নিজেই নিজেকে বিয়ে করার ঘোষণা দিয়ে রাতারাতি আলোচনায় উঠে এসেছেন ভারতীয় এক তরুণী; জানিয়েছেন—হিন্দু বিবাহ-রীতির সবটা মেনে হবে যাবতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান। খবর বিবিসির।

সাজানো হচ্ছে বিয়ের মণ্ডপ। যাবতীয় প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী যাবতীয় উপকরণও থাকবে। কিন্তু, বিয়েতে পাত্র থাকবেন না, থাকবেন শুধু পাত্রী। বিয়েও হবে, তবে নিজেই নিজেকে বিয়ে করবেন ওই পাত্রী। এমনই এক অদ্ভূত বিয়ে হতে যাচ্ছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে।

পাত্রীর নাম ক্ষমা বিন্দু (২৪)। আগামী ১১ জুন বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গুজরাটের ভাদোদরার বাসিন্দা ক্ষমা বিন্দু। তিনি নিজেই নিজেকে বিয়ে করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। হিন্দু বিবাহ-রীতির সবকিছু মেনে হবে যাবতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান। গায়ে হলুদ হবে; বিয়ের দিন থাকবে অগ্নি সাক্ষী রেখে সাতপাকের প্রথা, হবে সিঁদুরদানও। এরপর দুই সপ্তাহের জন্য মধুচন্দ্রিমায়ও যাবেন ক্ষমা।

এমন বিয়ে কেন?

সংবাদমাধ্যমে ক্ষমা বিন্দু জানিয়েছেন, তিনি কখনও বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু, বিয়ের কনে হতে চেয়েছেন। সে কারণেই নিজেই নিজেকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী ক্ষমা বিন্দু।

ক্ষমার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল বলছে—তিনি পেশায় একজন ডিজিটাল ক্রিয়েটর। তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। জুনে ‘প্রাইড মান্থ’ চলছে। নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী (এলজিবিটিকিউ) জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা, স্বীকৃতি, অধিকার ও সম্মানের কথা বলতে উদ্‌যাপন করা হয় ‘প্রাইড মান্থ’। সে মাসেই এমন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্ষমা। তিনি জানিয়েছেন—নিজের জন্য বাঁচা, নিজেকে ভালোবাসার কারণেই এমন বিয়ের সিদ্ধান্ত। তাঁর ভাষায়—নিজের সত্ত্বাকে সম্পূর্ণরূপে মেনে নেওয়া হবে এ পদক্ষেপের মাধ্যমে।

ক্ষমার ভাষ্য—দুটি মানুষ ভালোবেসে পরস্পরকে বিয়ে করেন। তিনি নিজেকেই ভালবাসেন, সে কারণে তিনি নিজেই নিজেকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। এভাবে বিয়ে করে তিনি নিজের জন্য কাজ করা, নিজের খেয়াল রাখার শপথ নেবেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তে তাঁর মা-বাবার সমর্থন রয়েছে এবং তাঁরা তাঁকে আশীর্বাদও করেছেন বলে জানিয়েছেন ক্ষমা।

ক্ষমা আরও একটি বার্তা দিতে চান বলে জানিয়েছেন। তিনি বলছেন—নারীর গুরুত্বের বার্তা দেবে তাঁর এ কাজ। ভারতে এমন বিয়ে প্রথম বার? গণমাধ্যমে ক্ষমা জানিয়েছেন—নিজেই নিজেকে বিয়েকে ইংরেজিতে ‘সলোগ্যামি’ বলা হয়ে থাকে। সলোগ্যামির এমন ঘটনা ভারতে হয়েছে কিনা, ক্ষমা জানেন না। তিনি জানান—হয়তো ভারতে এমন বিয়ে প্রথম বার তিনিই করছেন।

সোলোগ্যামি কী?

নিজেই নিজেকে বিয়ে করাটিকে ‘সোলোগ্যামি’ বা ‘অটোগ্যামি’ বলা হয়ে থাকে। বিশ্বে নানা জায়গায় এমন বিয়ের নজির দেখা গেছে। যাঁরা এ প্রথাকে সমর্থন করেন, তাঁরা দাবি করেন—নিজের গুরুত্বকে সবচেয়ে আগে রেখে খুশি থাকতে গেলে এমন বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত কোনো দেশের আইনে আলাদা করে এমন বিয়ের স্বীকৃতি নেই। এ ছাড়া সামাজিকভাবে এমন বিয়ের আলাদা করে স্বীকৃতি রয়েছে বলেও শোনা যায় না।

নিজেকে ‘বিয়ে করার’ ধারণাটি প্রথম আলোচনায় আসে প্রায় দুই দশক বছর আগে। জনপ্রিয় মার্কিন সিরিজ ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র একটি চরিত্র ‘ক্যারি ব্র্যাডশো’র মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু, সেটি ছিল পর্দায়।

এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নিজেকে নিজে ‘বিয়ে’র খবর জনসমক্ষে এসেছে। এসব ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাত্রী ছিলেন অবিবাহিত কোনো নারী। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে পশ্চিমা রীতিতে নববধূরা সুসজ্জিত বিয়ের গাউন পরে করিডোরে হেঁটেছেন, কখনও কখনও এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুরা তাঁদের উৎসাহ দিয়েছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে, এমন ‘বিয়ে’র পর অস্বাভাবিক একটি ঘটনাও ঘটেছিল। তেত্রিশ বছর বয়সি এক ব্রাজিলীয় মডেল নিজেকে ‘বিয়ের’ তিন মাসের মাথায় নিজের সঙ্গে ‘বিচ্ছেদ’ও করেছিলেন।

এ ধরনের ‘বিয়ে’ ঘিরে ব্যবসাও বিশ্বের অনেক জায়গায় চালু হয়েছে। এসব ব্যবসায় উদ্যোগ বিয়ের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। বিয়ের মধ্যে আংটি থেকে শুরু করে সবকিছুই তাদের কাছে পাওয়া যায়। বিভিন্ন বার্তা লেখা কার্ডও সরবরাহ করে থাকে তারা। যেমন, কোনো কার্ডে লেখা থাকে—‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমি দুর্দান্ত’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *