নিজস্ব প্রতিবেদন: পৌষের সকাল, কিংবা দুপুর-বিকেল। চারদিকের পাকা ধানগুলো কেটে নিয়ে গেছে কৃষক। ধানকাটার বাকি যে অংশ, তাতে ক’টা পাকা ধান খাওয়ার লোভে মাটিতে নেমে আসে নানান পাখপাখালি। তাদের ডানাঝাপটানোর ছন্দময় শব্দে প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যকে ফিরে পায় বারবার।এই দৃশ্য দেখে চমকে ওঠে একজনের মন।
তার ভেতরের উচ্ছ্বাস রোমাঞ্চ জাগানোর পাশাপাশি জাগায় লোভ! বিস্তার করে লালসা। ঘুঘু দেখেছো কিন্তু ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি’—প্রবাদ হিসেবে একথা আমরা প্রায়ই বলে থাকি। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি গ্রামে ঘুঘু ও ঘুঘু ধরার ফাঁদ দুইয়েরই দেখা মিলেছে।
কৃষক আব্দুল মান্নান (৬০) একটি খাঁচায় বন্দী ঘুঘু পাখি নিয়ে বাঁশঝাড়ের কাছে ধান ও সবজি ক্ষেতে ঘুঘু ধরার জন্য যাচ্ছেন। খাঁচাবন্দী পাখি নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “এইটা ঘুঘু পাখি, এই পাখি ধরে খাঁচায় বন্দী করেছি এই পাখি দিয়েই আরো পাখি ধরি।”ঘুঘু ধরার ফাঁদ ও পদ্ধতিও বেশ অভিনব।
বাঁশের একটি খাঁচার ভিতরে জীবন্ত ঘুঘু পাখি রেখে দেওয়া হয় খাবারসহ। খাঁচাটি জাল দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয় যা সহজে দৃষ্টিতে গোচর হয় না। যেখানে পাখির সমারহ হয় বা আবাসস্থল আছে এমন বাঁশঝাড় সংলগ্ন ধান বা সবজি ক্ষেতে পাখির আনাগোনা দেখে লম্বা বাঁশের সাহায্যে শব্দ না করে খাঁচাটি রাখা হয়।
নিরাপদ দূরত্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয় খাঁচাটিকে। খাচার ভিতর বন্দী ঘুঘু পাখি ডাকাডাকি শুরু করে। সেই ডাকে সেখানে বা আশেপাশে বিচরণ করা পাখিরা আকৃষ্ট হয়ে খাঁচার কাছে আসে খাবারের লোভে অথবা বন্দী ঘুঘুকে মুক্ত করতে কিংবা দেখতে। খাঁচার খুব কাছে গিয়ে খাঁচায় পা অথবা ঠোঁট বাড়িয়ে দিলেই জালে জড়িয়ে আটকে যায়।
দূর থেকে শিকারী ছুটে এসে ঘুঘুটিকে ধরে ফেলে।শখের বসে এভাবে পাখি ধরে প্রায়ই রান্না করে খান আব্দুল মান্নান। ফাঁদ পেতে পাখি ধরা অন্যায় জানালে তিনি বলেন, “নাতির শখ পূরনের জন্য মাঝেমাঝে পাখি ধরি।” কোদালকাটি বাজারে গিয়ে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার নিয়ে কথা হয় শিক্ষক ও সমাজকর্মী আমিনুর রহমানের সাথে।
পাখি শিকারের ছবি দেখালে তিনি বলেন, “আগে দেখতাম প্রচুর পাখি শিকার হতো। এখন প্রাকৃতিক কারণে এবং আবাসস্থল ও গাছপালা কমে যাওয়ায় পাখির সংখ্যা কমে গেছে। তাড়াছা মানুষের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রামের কিছু মানুষ মাঝে মাঝে ফাঁদ পেতে ঘুঘু, বক, বালিহাঁস শিকার করে বলে শুনেছি।”
তিনি আরো জানান পাখি শিকার বন্ধে ও প্রকৃতিতে এর উপকারিতার এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, এর লঙ্ঘনে যে শাস্তির বিধান আছে সে বিষয়েগুলো নিয়ে প্রচারণা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে পাখি শিকার পুরোপুরি বন্ধ হবে।