গ্রামের নদীতে চলছে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব, সবার হাতেই ধরা পড়ছে বড় বড় মাছ, নেটদুনিয়ায় ভাইরাল ভিডিও

নিজস্ব প্রতিবেদন: মাছ ধরা অনেকেরই আবেগ ,অনেকেরই পেশা,আবার অনেকেরই সখ।মাছে-ভাতে বাঙালির জীবন, সেই মাছ যখন হারিয়ে যাচ্ছে তখন দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওরে মাছ ধরার উৎসবের কথা অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতো। গ্রাম বাংলার জনপদে নানাভাবে মাছ ধরার পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।

যা আবহমান বাংলার দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারক বহন করে। কিন্তু এ সংস্কৃতি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাছ ধরার উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম উৎসব হচ্ছে পলো বাওয়া।পলো বাওয়া উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ।নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলেরা পলো বাওয়া উৎসব কি সেটা বুঝে না। কিন্তু সেই উৎসবটি ধরে রেখেছেন গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা।

যেখানে প্রত্যেক বছর একটা নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরার উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মাছধরা উৎসবের অন্যতম নান্দনিক পদ্ধতি হলো পলো বা বাওয়া। এটি আবহমান বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপিকেই বলা হয় পলো। শুষ্ক মৌসুম এলেই শৌখিন মাছ শিকারিরা পলো নিয়ে নদী নালার পানিতে দলবেঁধে নেমে পড়তেন।

উৎসবমুখর পরিবেশে তারা শিকার করতো ছোট বড় অনেক মাছ। প্রতি বছর আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে এই পলো বাওয়া উৎসব। তবে দখল, দুষণ ও ভরাটসহ নদীর অস্তিত্ব সংকটের কারণে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই পলো উৎসব।

পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক ঝাপ দেওয়া আর হৈহুল্লোর করে সামনের দিকে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় এক দৃশ্য।মাছ শিকার উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল, পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে।

তবে পলো সহ দেশীয় উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করলে যেমন খরচ কম, তেমনি মাছের বংশ বিনাশ হয় না। মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহু কাল আগে থেকে। বাঁশের তৈরি এই পলো মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন কৃষকরা। এই উৎসব গুলো সাধারণত বিভিন্ন ডুবায় আয়োজন করা হয়ে থাকে।বছরের নির্দিষ্ট একটি দিন তারিখ ঠিক করে উৎসবটি পালন করা হয়ে যাবে।

প্রধানত পলো, উড়াজাল, টেলাজালসহ নানা ধরনের জাল ও মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে মাছ ধরায়নেমে পরে গাঁয়ের শত-শত ছেলে, বুড়ো, যুবক। সাথে থাকে খলুই হাতে ছোট্ট শিশুরাও। অনেকে আবার ছিটকির সারির পেছনে পেছনে টেলা জাল হাতে নিয়ে নেমে পড়ে। যার ছিটকি বা টেলা জাল কিছুই নেই সেও নেমে পড়ে খালি হাতে। সে সময়ে দেখা হয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সঙ্গে।

চলে একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় আর হাসি-ঠাট্টা। এভাবেই প্রতিবছর শুরু হয় আবহমান বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাছ ধরার উৎসব।এ উৎসবে মেতে উঠে নানা বয়সের মানুষ। দল বেঁধে হাজারো মানুষ বিলে নামে মাছ ধরতে। সবার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। কেউ পলোতে বোয়াল ধরে আবার কেউ বা জালে চিতল। এ যেন হারিয়ে যাওয়া এক মিলনমেলা।

পুরো শীত মৌসুমেই গ্রামগঞ্জে মাছ ধরার এই চিত্র চোখে পড়ে। আর মাছ ধরায় সামিল হতে পেরে শিশু-কিশোরদের আনন্দ আর আনন্দ। কাদা-পানিতে সারা শরীর মাখামাখি করে তারা মাছ ধরার আনন্দে বিভোর থাকে। জাল ফেলে কই, মাগুর, পুটি, শিং, চিংড়ি, পুঁটি মাছসহ হরেক রকম মাছ ধরা হয়।কৈ, শিং, মাগুর প্রভৃতি দেশি জাতের জিয়ল মাছই ধরা পড়ে বেশি।

তাছাড়া টেংরা, খইলসা, শোল, টাকি, বোয়াল, চিকরা, বাইন, কাতলা, সিলভার কার্প প্রভৃতি মাছ তো রয়েছেই। বর্ষাকালে ফিশারিসহ বিভিন্ন জলমহলের মাছ ভেসে গিয়ে ডোবা-পুকুর, খাল-বিল এবং নিচু জমিতে আশ্রয় নেয়। পরে শুকনো মওসুমে সেই সব মাছ ধরা পড়ে।

সারাদিনের কাদা-পানিমাখা মানুষটিকে চেনাই দায় হয়ে পড়ে। এ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পরিচিতজনদের মাঝে আর বাড়ি ফিরে নারী-মহলে চলে হাসি-ঠাট্টা আর রসিকতা। এভাবেই শেষ হয় দিনব্যাপী মাছ ধরা উৎসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *