নিজস্ব প্রতিবেদন:অস্ট্রেলিয়াতে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে অজগরের হাত থেকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। আকারে শিশুটির চেয়ে তিনগুণ বড় এই সাপটি প্রথমে তাকে কামড় দেয় এবং পরে পেঁচিয়ে, টেনে-হিঁচড়ে সুইমিং পুলে নিয়ে যায়। বিউ ব্লেক নামের এই শিশুটির পিতা বেন ব্লেক অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনের কাছ এই ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন তার সন্তান যখন সুইমিং পুলে খেলা করছিল, ঠিক তখনই দশ ফুট লম্বা অজগর সাপটি তাকে আক্রমণ করে। সাপটি যখন বিউকে সুইমিং পুলের পানিতে ফেলে দেয়, তখন শিশুটির দাদা, ৭৬ বছর বয়সী অ্যালান, পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিউ ও সাপটিকে টেনে ওপরে তোলেন। সাপটি তখনও বিউকে পেঁচিয়ে রেখেছিল।শেষ পর্যন্ত বিউর পিতা দুহাত দিয়ে টেনে সাপটির কাছ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছে নিউ সাউথ ওয়েলসে, গত সপ্তাহে। বেন ব্লেক বলেছেন তার ছেলে সুইমিং পুলের কিনার ধরে হাঁটছিল। অজগর সাপটি সেখানেই ওঁৎপেতে বসে ছিল। অপেক্ষা করছিল তার ওপর আক্রমণ করার জন্য।এই ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে বিউ বেঁচে গেছে। পরে অজগরটি যেখান থেকে এসেছিল, সেখানেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।নিজের আকৃতির চেয়েও কয়েক গুণ বড় শিকারকে কিভাবে গিলে খেয়ে ফেলে অজগর সাপ?
বিজ্ঞানী ফরিদ আহসান বলছেন, প্রথমে সাপ তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে চাপ দিয়ে মেরে ফেলে এবং পরে মাথার দিক থেকে খাওয়া শুরু করে।“আমরা আমাদের মুখের চোয়াল একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ হাঁ করতে পারি। কিন্তু সাপ তার চোয়াল ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত বড় করতে পারে, যে কারণে সে তার চাইতেও বড় কোনো প্রাণী গিলে খেয়ে ফেলতে পারে।বড় কোনো প্রাণীকে গিলে খাওয়ার পর অজগর সাপ অনেকদিন চুপচাপ পড়ে থাকে।
নড়াচড়াও করে না।অজগর সাধারণত উপদ্রবহীন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে, যে কারণে তারা লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলের গভীরে থাকে।বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, অধিকাংশ অজগর কিছুটা বৃক্ষবাসী। তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলের কাছেও এদের দেখা যায়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসান বলছেন, যে কোন বন্যপ্রাণীর আবাস ঝুঁকির মুখে থাকলে এবং খাবারের সংকট হলে তারা লোকালয়ে বেরিয়ে আসে।অজগরের ক্ষেত্রেও আবাস সংকোচনের ফলে তাদের খাবার সংকট হচ্ছে।
ফলে তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খাবারের খোঁজে আসছে।”এ পরিক্রমায় অনেক সময়ই তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে আর বের হতে পারে না।এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে পাহাড় বা ঘণ জঙ্গল আছে, সেসব জায়গায় এপ্রিল-জুন এ সময়ে পাহাড়ে অনেক সময় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।অধ্যাপক আহসান বলছেন, ওই সময় আগুনের কারণে বা প্রচন্ড গরমে সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় অজগর বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল এইচ খান মনে করেন, বর্ষাকালে নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ায় বা স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ার কারণে তুলনামূলক উঁচু জায়গায় চলে আসে অজগর।আবার বন্যায় ভেসেও অনেক সময় তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে আসে।এছাড়া অজগরের প্রজননরে সময় শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। ফলে এই সময়ে তাদের লোকালয়ে বা প্রকাশ্য স্থানে কম দেখা যায়।