গর্ভবতী নারী সম্পর্কে এ বিষয়গুলো জানা উচিৎ প্রতিটি পুরুষের!

প্রতিটি নারীর জন্য মা হওয়ার অনুভূতি যেন ব্যাখ্যার অতীত একটি ব্যাপার। এই অনুভূতিকে ভাষার মাধ্যমে সঠিকভাবে এবং পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ নয় মাস অপেক্ষা করার পর একটি সন্তান জন্ম নেওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র একজন মায়ের জন্ম হয় না, একই সাথে একজন বাবা’রও জন্ম হয়!

এই নয় মাস সময়টুকু একজন নারীর জন্য কষ্টকর তো বটেই, একজন পুরুষ এর জন্যেও অনেকদিক থেকেই চ্যালেঞ্জিং। এই সময়টুকুর মাঝে একজন নারীর শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তনের মাঝে দিয়ে যেতে হয়। যার প্রভাব পড়ে দাম্পত্য জীবনে, সংসারে এমনকি তার জীবনসঙ্গীর উপরেও। কঠিন এই সময়ের মাঝে একজন নারীকে বহু কষ্ট স্বীকার করতে হয় বলে তার প্রতিদিনের অভ্যাস, মনমেজাজ এর মধ্যে পরিবর্তন চলে আসে অনেকখানি।

এই সকল বিষয়ের জন্য তার প্রতি অভিযোগ না রেখে বরং তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা উচিৎ তার সঙ্গীর। যে কারণে প্রতিটি পুরুষের তার গর্ভবতী স্ত্রীর খুব সাধারণ কিছু ব্যাপার সম্পর্কে জানা উচিৎ। গর্ভবতী নারীর অতিরিক্ত ক্ষুধার প্রবণতা গর্ভাবস্থায় বেশীরভাগ নারীর অনেক বেশী ক্ষুধার প্রবণতা দেখা দেয়। হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্যেই এমন অতিরিক্ত ক্ষুধাভাব তৈরি হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। গর্ভাবস্থায় নারীকে সবসময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হয়।

বিশেষ করে যখন তার অতিরিক্ত ক্ষুধাভাব দেখা দেবে, তখন কোনভাবেই তাকে না খাইয়ে রাখা যাবে না। অনেক সময় গভীর রাতেও তার ক্ষুধাভাব দেখা দিতে পারে। যেটা গর্ভাবস্থায় নিত্যনৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক একটি ঘটনা।
গর্ভাবস্থা গর্ভাবস্থায় ওজন অনেক বেড়ে যাওয়া এটা সার্বজনীন সত্য যে, গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীর ওজন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী বেড়ে যায়। তার খাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ওজন বৃদ্ধি পাবে এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার।

প্রতিদিন একজন গর্ভবতী নারী তার শরীরের পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারেন এবং সেটা সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানেন। বারংবার এই ব্যাপারে তার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। অথবা, তাকে এই একই কথা বারবার বলার প্রয়োজন নেই। একজন নারী মোটা হয়ে যাওয়াকে সবচাইতে বেশী ভয় পান। কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য তিনি তার ভয়কে পরোয়া না করে, নিজের বাড়তি ওজনকে মেনে নিয়ে যখন প্রতিদিন লড়ায় করছেন, তখন তার জীবন সঙ্গীর উচিৎ তার পাশে থাকা, তাকে সমর্থন করা। গর্ভাবস্থায় যৌনজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা

গর্ভাবস্থা থাকাকালীন সময়ে নানান রকম শারীরিক সমস্যার মাঝে অন্যতম যে সমস্যাটি দেখা যায় সেটা হলো- অনেক বেশী বমিভাব দেখা দেয় এবং ঘন ঘন বমি হতে থাকে। এমতবস্থায় একজন নারী অনেক বেশী দূর্বল হয়ে যান এবং তার যৌনক্রিয়ার প্রতি প্রবল অনীহা দেখা দেয়। সকলের মাঝে এই প্রবণতা দেখা না দিলেও, বেশীরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় একজন নারী যখন শারীরিক সম্পর্কের প্রতি অনীহা প্রকাশ করবেন, তখন সেটা সম্মান করতে হবে। কোন অবস্থাতেই তার প্রতি জোর করা যাবে না।

ঠিক একইভাবে গর্ভাবস্থায় নারী যদি শারীরিক সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন তবে তাকে সমর্থন জানাতে হবে। বেশীরভাগ সময় গর্ভাবস্থায় নারী তার সঙ্গীর সান্নিধ্যে থাকতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করতে হবে।গর্ভাবস্থায় নারীর সার্বক্ষনিক ক্লান্তিবোধ একজন নারী গর্ভাবস্থায় প্রায় সবসময় প্রচণ্ড শারীরিক ক্লান্তিতে ভুগে থাকেন। অনেকেই বিরক্ত হয়ে থাকেন এই ব্যাপারটির জন্য। তবে একবার ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিৎ। গর্ভাবস্থায় নারী নানান ধরণের শারীরিক পরিবর্তন এবং সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। পাশাপাশি তিনি তার গর্ভে একটি মানব সন্তানকে বড় করছেন। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে শারীরিক শক্তি এবং ধকল এর মাঝে দিয়ে তাকে প্রতিটাদিন পার করতে হয়।

নিজের এবং তার জীবনসঙ্গীর আনন্দ এবং খুশির কারণ- তাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। তাই কখনোই তার ক্লান্তি নিয়ে, তার অলসতা নিয়ে কোন ধরনের অভিযোগ করা উচিৎ নয়। এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন করাও উচিৎ নয় একেবারেই। সন্তান জন্মদান নিয়ে তার ভয় পরিবারে নতুন সন্তান আগমনের ব্যাপার নিয়ে বাবা যখন অনেক আনন্দিত থাকেন তখন মায়েরা সন্তান জন্মদানের ব্যপারটি নিয়ে অনেক বেশী ভীত এবং আতঙ্কের মাঝে থাকেন। তিনি জানেন না যে, সন্তান জন্মদানের সময় তাকে কতক্ষণ লেবার পেইনের ভেতর দিয়ে যেতে হবে!

তার নরমাল ডেলিভারি হবে নাকি সিজারিয়ান ডেলিভারি হবে! তিনি জানেন না যে, আবারও পূর্বের মতো কতদিনে তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। এমনই নানান ধরণের চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা তার মনের মাঝে ধাক্কা দিতে থাকে। এছাড়াও থাকে সন্তান জন্মদান পরবর্তি নানান বিষয়ের ক্ষেত্রে আশঙ্কা এবং আতঙ্ক। সকল কিছু মিলিয়ে একজন গর্ভবতী নারী মানসিকভাবে অনেক বেশী দূর্বল হয়ে পড়েন এই সময়ে। তাই এই সময়ে তার জীবনসঙ্গীর উচিৎ সার্বক্ষনিকভাবে তার পাশে বন্ধুর মতো থাকা, তাকে মানসিকভাবে সাহস দেওয়া, তাকে সমর্থন করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *