নিজস্ব প্রতিবেদন:বানরের সন্তান কুকুর ছানা। বিষয়টি আপনার বিস্ময়ের কারণ হলেও এমনটি হয়েছে ইসরাইলের এক সাফারি পার্কে। নিজের জননীসুলভ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে নিভ নামের ৪ বছরের এক বানর। সে দত্তক নিয়েছে একটি কুকুর ছানাকে গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে নিভ মাতৃস্নেহে লালন-পালন করে চলেছে কুকুর ছানাটিকে।
নিয়মিত গোসল করাচ্ছে, একসঙ্গে খেলাধুলা করছে এবং যেকোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আদরের কুকুরটিকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।ওই সাফারি পার্কে কর্মকর্তা মোর পরাট সাংবাদিকদের বলেন, সঙ্গী খুঁজে পেতে বেশ সমস্যায় ভুগতে হচ্ছিলো নিভকে। এজন্যেই হয়তো সে কুকুরছানা টিকে নিজের সন্তানের মতো পালতে শুরু করেছে।তিনি আরো বলেন, এদের মধ্যকার বোঝাপড়াটা বিস্মিত করেছে চিড়িয়াখানার প্রত্যেককে।
নিভের খাঁচার ফাঁক গলে সহজেই পালাতে সক্ষম কুকুর ছানাটি। কিন্তু প্রথম থেকেই সে নিভের সঙ্গেই থাকছে।এমনকি বন্যপ্রাণীর খাঁচায় গৃহপালিত ছানাটি কিভাবে প্রবেশ করলো- সে বিষয়েও সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ।ইন্দোনেশিয়ান ব্ল্যাক ম্যাকাক প্রজাতির এই বানর অনেক সময় ছানাটি বা এ জাতীয় অন্যান্য পাখিদের হাতের কাছে পেলে মেরে খেয়ে ফেলে।
তাই নিভের স্বপ্রজাতির অন্য কেউ যেন ছানাটির কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য তাদেরকে আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে।এখন পর্যন্ত ছানাটির কোনো নাম রাখেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সংবাদ মাধ্যমকে পরাট বলেন, নতুন অভিভাবক খুঁজে পেয়ে আনন্দেই দিন কাটছে তার। রাতেও সব সময় একসঙ্গে ঘুমাচ্ছে তারা।ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। তবে সেটি সম্ভব হয় মানুষের হস্তক্ষেপে।
বানর আর ছানাটির মধ্যে সৃষ্ট এমন প্রাকৃতিক বন্ধুত্ব সত্যিই বিরল।ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব দ্য কনজারভেশন অব ন্যাচারের তথ্যমতে, ব্ল্যাক ম্যাকাক বিলুপ্তপ্রায় বানর প্রজাতি। ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলের বনভূমি ও আশেপাশের দ্বীপগুলোতে এদের দেখা মেলে।খাঁচার ভেতরের পৃথিবীটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা। বয়সও হয়েছে। এই বয়সে আর নতুন কোনো সঙ্গী পাওয়া সম্ভব নয়।
বাচ্চাকাচ্চাও নেই। বড় একা লাগে। তা নিজের বাচ্চা নেই তো কী হয়েছে।অন্যের বাচ্চাকে বুকে তুলে নিতে তো দোষ নেই। মাতৃসত্তার কোনো সীমানা থাকে না। সে মানুষ হোক বা মনুষ্যত্বের। অন্তত এ রকমটাই বুঝিয়ে দিল ইসরায়েলের চিড়িয়াখানার এক বাঁদর।বিশেষ প্রজাতির এই বাঁদরটির নাম নিভ। কিছুদিন ধরেই তার একাকিত্ব নজরে এসেছিল কর্মীদের। কিন্তু কী আর করার আছে। অগত্যা সে একাই থাকত।
এমন সময় এক ছানাটির বাচ্চাকে আপন করে নিতে যায়। তাতে হিতে বিপরীত, ঘটে বিপত্তি। ভয়ে পালায় ছানাটি ছানা। পালানোই স্বাভাবিক। কেননা এই বিশেষ প্রজাতির বাঁদরদের বদনাম আছে, এরা ছানাটি পেলেই মেরে ফেলে।খেলার ছলে এমন হাল করে যে, মৃত্যু ঘটে এই ছোট পাখিগুলো।কিন্তু কিছুদিন পর একটা দৃশ্য থেকে চোখ আটকে যায় কর্মীদের।দেখা যায়, অন্য একটি ছানাটি ছানাকে বুকে আঁকড়ে ধরেছে নিভ।
আর ছানাটিও বেশ আদরে কোলে বসে আছে। ভয়ডরের লক্ষ্মণ নেই। চাইলেই খাঁচার ফাঁক দিয়ে পালাতে পারত, কিন্তু তার কোনো তাড়াই নেই। বরং এই নতুন মায়ের সঙ্গে দিব্যি সুখে সময় কাটাচ্ছে সে।দেখে ভালো লাগে কর্মীদের। এতদিনে খানিকটা একাকিত্ব ঘুচল নিভের। আপাতত তার এই দত্তক সন্তানের সঙ্গেই দিনভর খেলাধুলোয় মেতে আছে নিভ।
যতই অন্যের বাচ্চা হোক, হাজার হলেও সে মা তো। দত্তক সন্তানে মায়ের যেমন একাকিত্ব ঘোচে, ছানাটি ছানাকে কোলে তুলেই তেমনই সুখে আছে নিভ। আর তা দেখে খুবই খুশি চিড়িয়াখানার কর্মীরাও।