নিজস্ব প্রতিবেদন:ভালোবাসার বিশালতা আমাদের কল্পনাকেও হার মানায়। বলা হয়, মানুষ জন্ম নেয় অসীম ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে। আমাদের মাঝেই আছেন এমন কিছু মানুষ যারা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন সবখানে, সকল প্রাণে।তাদের সেই ভালোবাসা, যত্ন আর মায়ায় ভালোভাবে বেঁচে থাকে অসহায় ও অবহেলিত অনেক পশু-পাখিও। তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সাহায্য পৌঁছে দিতে পশুপ্রেমীরা।
একসঙ্গে জড়ো হতে আজকাল বেছে নিচ্ছেন ফেসবুক। সামাজিক এ যোগাযোগমাধ্যমে পশুপ্রেমীদের এমন বেশ কিছু গ্রুপ এবং পেজ আছে যার স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা অসহায় কোনো প্রাণীর খোঁজ পেলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন শহরের যে কোনো প্রান্তে। স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন অসহায় সব প্রাণীর সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য। কখনও এগুলোকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে নিশ্চিত করছেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এ রকম একটি জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ‘রবিনহুড দি অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার’। বর্তমানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশের সব প্রান্তের পশুপ্রেমীরা একত্রিত হচ্ছেন গ্রুপটিতে।কোথাও কোনো কুকুর-বিড়াল আটকা পড়েছে বা আঘাত পেয়েছে? এই গ্রুপে যোগাযোগ করলেই কোনো না কোনো ‘রবিনহুড’ ছুটে যাচ্ছেন সেই অবলা প্রাণীকে রক্ষা করতে।
রবিনহুড মূলত ঢাকার অবহেলিত প্রাণী রক্ষায় এগিয়ে গেলেও বর্তমানে সারাদেশের মানুষ এই গ্রুপের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন। তারা অসহায় প্রাণীগুলোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে জোগাচ্ছেন অনুপ্রেরণা। আপনার প্রিয় পোষা প্রাণীটি অসুস্থ বা চলার পথে অসুস্থ কোনো প্রাণী চোখে পড়েছে?ছবি তুলে বা সমস্যার কথা লিখে গ্রুপে সাহায্য চাইলে মুহূর্তেই গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন,
কেউ-বা দিচ্ছেন পশু চিকিৎসক কিংবা পশু হাসপাতালের নাম্বার ও ঠিকানা। অনেক সময় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরাই ওষুধ নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন রাস্তার ওই প্রাণীর যত্ন নিতে। অথবা নিয়ে যাচ্ছেন পশু চিকিৎসকের কাছেও।তবে রবিনহুড গ্রুপের শুরুটা ছিল খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। আর যাত্রার এই পথ সহজ ছিল না মোটেও। এ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় আফজাল খানের হাত ধরে। ২০১০ সালে এক বৃষ্টির রাতে রাস্তায় থলেবন্দি কয়েকটি বিড়ালছানার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান আফজাল। কোনো একজন সেগুলো ফেলে গিয়েছিল ল্যাম্পপোস্টের নিচে। মানুষের নিষ্ঠুরতা সেদিন ভীষণভাবে নাড়া দেয় আফজালকে।
বাড়িতে এনে নিজের মতো চিকিৎসা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বাচ্চাগুলোকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। তখন বুঝতে পারেন অসহায় এসব প্রাণীকে বাঁচাতে চাইলে তাদের সঠিক পরিচর্যার পদ্ধতি তাকে জানতে হবে। এটাও বুঝতে পারেন, আমাদের চারপাশে অসহায় এমন প্রাণী অসংখ্য, যার সবগুলোকে রক্ষা করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আর সেই চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় রবিনহুড।
বর্তমানে ফেসবুক গ্রুপের পাশাপাশি আফজাল এবং তার দল প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য পরিচালনা করছেন ‘রবিনহুড কেয়ার’ ক্লিনিক। চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে অসহায় প্রাণীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।ক্লিনিকটিএখন অবহেলিত পশুর এক অভয়াশ্রম।শুধু রবিনহুড নয়, ফেসবুকে রয়েছে এরকম আরও বেশকিছু পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবীদের গ্রুপ। এর একেকটির সদস্য সংখ্যা হাজার হাজার।
এর মধ্যে আছে ক্যাট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ডগ সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পেট লাভারস বিডি ইত্যাদি। এর মাধ্যমে মানুষ নিয়মিত শেয়ার করছে নিজেদের আদরের পোষা প্রাণীর ছবি, দিচ্ছে অ্যাডাপশন পোস্ট, সঙ্গে বিভিন্ন পরামর্শ।আছে অভয়ারণ্য ও কেয়ার ফর পজের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা/গ্রুপ যারা প্রাণী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, পশুদের টিকা প্রদান এবং প্রাণী উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণদানসহ নানা কাজে জড়িত।
তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম পোস্ট করার মাধ্যমে পশুপ্রেম ছড়িয়ে দিচ্ছেন লাখ লাখ মানুষের হৃদয়ে। নিজেদের মানবিকতা আর কাজের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করে চলেছেন আমাদের চারপাশের অবলা প্রাণীদের সুস্থতা, নিরাপত্তা আর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার।