কীভাবে আমাদের প্রতিদিনের খোড়াক ডলার বা টাকা তৈরি হয়, জানেন কী? আধুনিক অর্থ ছাপানোর কারখানা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা। রইল সেই ভিডিও

<strong>নিজস্ব প্রতিবেদন:</strong>বাংলাদেশে টাকা ছাপানোর বিশেষ কাগজ আসে সুইজারল্যান্ড থেকে। সবদেশের প্রায় সব ব্যাংকনোট তুলার তৈরি কাগজ থেকে তৈরি হয়, যার ওজন প্রতি বর্গমিটার ৮০-৯০ গ্রাম। তুলার সেই কাগজে মাঝেমধ্যেই লিনেন যুক্ত করা যায়। এই কাগজগুলো প্রায় ২ বছর পর্যন্ত স্থায়ীত্ব পায়।

এ কাগজে জিলাটিন বা পলিভিনাল অ্যালকোহল যোগ করা হয় বলে বেশ টেকসই।কিছুদিন আগে “লা কাসা দে পাপেল” নামে স্প্যানিশ একটা টিভি সিরিজ বেশ শোরগোল তুলেছিল। এতে দেখে যায়, একদল ডাকাত একটা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে ঢুকে কিছু মানুষকে জিম্মি করে টাকা লুট করছে। তবে তাদের লুট করার পদ্ধতি একটু ভিন্ন। তারা ব্যাংকের টাকা লুট না করে, বরং ব্যাংকের টাকা প্রিন্ট করার মেশিন ব্যবহার করে তৈরি করে নিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

এটা দেখার পর কারও কি এ প্রশ্ন মাথায় এসেছে, যে তাদের মত সরকার নিজেই যদি বিলিয়ন-বিলিয়ন টাকা প্রিন্ট করে আমাদের হাতে তুলে দেয়, তাহলেই তো সব আর্থিক সমস্যা মিটে যায়! কিংবা, সরকার যদি বস্তা বস্তা টাকা প্রিন্ট করে পদ্মা সেতু, মেঘনা সেতু, বুড়িগঙ্গা সেতু তৈরী করে, তাহলেই বা সমস্যা কোথায়?অনেক সমস্যা রে ভাই, অনেক সমস্যা। এত বড় সমস্যার এত সহজ সমাধান হলে দুনিয়ায় আর কোন চিন্তাই থাকত না। সমস্যাটা কোথায়, বলি।

নির্দিষ্ট করে বললে টাকা প্রিন্ট করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তো, সে কীসের ভিত্তিতে টাকা তৈরী করে? সে কি মন চাইলেই যত ইচ্ছা টাকা প্রিন্ট করতে পারে?টাকা উৎপাদন করার কোন আবশ্যক নিয়ম নেই। কোন দেশের সরকারের যত ইচ্ছে টাকা প্রিন্ট করার স্বাধীনতা রয়েছে। তবে কোন দেশই যত ইচ্ছা টাকা প্রিন্ট করে না, টাকা প্রিন্ট করা হয় সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজন অনুসারে তার সাথে ভারসাম্য রেখে।

টাকা উৎপাদনের পরিমাণের সাথে জড়িত দেশের মানুষের উপার্জন, অর্থনৈতিক চাহিদা, দেশের সম্পদ ইত্যাদি। এর বেশি উৎপাদন করলেই শুরু হয় সমস্যা, দেশের অর্থনীতি ভারসাম্য হারাতে শুরু করে।ধরুন, একটা দেশে সম্পদ বলতে রয়েছে দশটা আম (কী ধরা যায় ভাবতে গিয়ে আমের কথাই মাথায় এল সবার প্রথমে, সম্ভবত মৌসুমী প্রভাব)। আর সেই দেশ বছরে ২০ টাকা প্রিন্ট করে।

পরিবহন খরচ, খুচরা মূল্য পাইকারী মূল্য ইত্যাদি জটিলতা বাদ দিয়ে ধরেই নিই প্রতিটি আমের মূল্য ২ টাকা। তাহলে দেশের মোট সম্পদ আর মোট কারেন্সী (Currency) ভারসাম্যপূর্ণ হল। পরের বছর ঐ দেশটি সর্বমোট ৪০ টাকা প্রিন্ট করল, কিন্তু মোট সম্পদ বলতে দশটি আমই রইল। যেহেতু দেশে নতুন কোন সম্পদ নেই, ওই ১০টি আম কেনার জন্য বরাদ্দ হল ৪০টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি আমের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল।

এভাবেই দেশের মোট সম্পদের তুলনায় অতিরিক্ত টাকা উৎপাদন করলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, টাকার দাম বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। একে বলে মূদ্রাস্ফীতি।দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে বেশি করে টাকা ছাপিয়ে আর লাভ কি হল? তাই একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রীতিমত গবেষণা করে চাহিদা নির্ধারণ করতে হয়, সেই অনুযায়ী টাকা প্রিন্ট করতে হয়। সাধারণত একটি দেশের জিডিপির ২-৩ শতাংশ টাকা প্রিন্ট করা হয়, তবে উন্নয়নশীল দেশে এই হার আরেকটু বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *