কলিজাটার মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি মুনীব, তাইতো হাউমাউ করে কাদলেন ‍যুবক। যুবক অতি আদরে পোষে ‍ছিলেন শালিকটিকে। রইল যুবক এবং শালিক জীবন কাহিনী।

নিজস্ব প্রতিবেদন:ছোটবেলায় আমার শালিক ছানা পোষার খুব শখ ছিল। খাঁচার ভেতর থেকে শালিক ছানা স্রেফ কিচিরমিচির করা শালিক হবে না, মানুষের বুলি নকল করে বলবে, ‘আম্মা, মেহমান আইসে, পিঁড়ি দাও।’ আমি শুনব, পাড়াসুদ্ধ সবাই শুনবে।

শুনে শুনে পুরো তল্লাটে রটে যাবে, অমুকের বাড়িতে কথা-কওয়া পাখি আছে, ঠিক মানুষের মতোই কথা কয়।পাড়ায় বেড়াতে বেরোলেই সবাই ডেকে ডেকে বলবে, অ্যাই, তোমার পক্ষী নাকি মাইনষের মতো কথা কয়?’গর্বিত ভঙ্গিতে আমি মাথা নাড়ব আর আমার এই পাখি দেখে সমবয়সীরা ঈর্ষায় পুড়বে,

এমন স্বপ্নে একদিন মায়ের কাছে একটি শালিক ছানার বায়না ধরি। মা তেতে ওঠেন, ‘বনের পাখিরে খাঁচায় বন্দী করবি মানে!’ মায়ের কাছে সুবিধে করতে পারিনি। তাই আব্বার দ্বারস্থ হই। আব্বা আমাকে ফিরিয়ে দেননি। ঠিকই একদিন পাশের গ্রামের রথের মেলা থেকে পিঞ্জিরাসহ একটি শালিক ছানা এনে দেন। আমার খুশি তো আর ধরে না!

আমি খুদে ছানার খাবারের জন্য শশব্যস্ত হয়ে উঠি। ইশকুল থেকে ফিরেই বোতল হাতে পাশের মাঠে বেরিয়ে পড়ি। চিঁচিঁ স্বরে আর্তনাদ করা এই পক্ষী-শাবকের খাবার ছিল সবুজ ঘাসফড়িং। ধানের খেত থেকে ধরে আনি সবুজ রঙের ঘাসফড়িং। সবুজ পতঙ্গের পা, মাথা ছিঁড়ে ঢুকিয়ে দিই হাঁ করা পাখির মুখে।

পাখি নিয়ে বিশেষ ব্যস্ততায় মা আমার যারপরনাই নাখোশ হন। পড়াশোনার বারোটা বাজার আশঙ্কায় তিনি প্রায়ই সেই পাখির খাঁচা খুলে মুক্ত করে দেওয়ার প্রয়াস চালান। বাদ সাধেন আব্বা।পাখিটি একদিন ফড়িং ছেড়ে দুধভাতে অভ্যস্ত হয়। শিস বাজানোর মতো করে শব্দ করতে শেখে। এসব দেখে আমার আনন্দ আর ধরে না।

আমি পাখি যত্নে আরও বেশি মনোযোগী হই। পাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে কথা প্রশিক্ষণ দিই। পাখিটিও অস্পষ্ট স্বরে মানুষের কথা নকল করে, ‘আম্মা দুধ, আম্মা দুধ…’। আমার স্বপ্ন তখন আরও তুঙ্গে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় প্রায়। কবে সেই পাখি বলতে পারবে, ‘মেহমান আইসে, পিঁড়ি দাও’।

আমি সেই ডাক শুনব বলে নির্ঘুম রাত কাটাই। পাখির খাঁচার দুধের কৌটায় দুধের ঘাটতি হয় না, পানীয় জলের অভাব পড়ে না। আমার স্বপ্ন কেবল আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।আমার স্বপ্ন যখন সফল হবে, এমন সময় একদিন আমার চোখে নেমে আসে আঁধার করা ভোর। আমি সকালের সূর্য ওঠা ভোরে সেদিন অন্ধকার দেখছিলাম, ঘাতক বিড়ালের থাবায় আমার সেই সাধের কথা-কওয়া পাখিটি তার কথা হারিয়েছে।

আমার স্বপ্নের ইতি ঘটেছে।পাখি মারা যাওয়ার দিন মা আমাকে ও আব্বাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলেন। পাখি হত্যার দায় সেদিন তিনি বিড়ালের ঘাড়ে চাপাননি, সব দায় ও দোষ চাপিয়েছিলেন আমাদের অর্থাৎ বাবা–ছেলের ঘাড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *