একদম কমদামে সাইকেলের চাকার মতো ধান কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করে ইন্টারনেটে সাড়া ফেলে দিল বিজ্ঞানীরা। মাত্র ১০ মিনিটেই আস্ত বড় ক্ষেত কেটে ফেলছে এই আধুনিক যন্ত্রটি। তুমুল ভাইরাল সেই ভিডিও

নিজস্ব প্রতিবেদন:সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদীবিধৌত কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আয়তন ১৪.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর, যার প্রায় ৮.৫২ মিলিয়ন হেক্টর জমি চাষাবাদে ব্যবহূত হয়। আমাদের দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রধান অন্তরায় প্রান্তিক কৃষকের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের অনুপযোগী ছোট কৃষিজমি, যেখানে মানসম্মত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যায় না। দেশের প্রান্তিক কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবেও অসচ্ছল।

তাদের উচ্চমূল্যে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সামর্থ্য নেই। এছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশ সফলভাবে তার আর্থসামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করেছে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উচ্চতর সূচক অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষির আধুনিকায়নে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সম্প্রতি সরকার ৩০২০ কোটি (৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকার একটি মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে প্রায় ৫৬ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা ২০২০ সালেই শুরু হতে যাচ্ছে।প্রকল্পে সরকার স্থানীয় যন্ত্রপাতি নির্মাতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পৃষ্ঠপোষকতা করবে, যাতে তারা আরো উৎপাদনশীল ও স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান, যা সম্পূর্ণভাবেই পানি ও ইউরিয়া সারের ওপর নির্ভরশীল।

আগাছা ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, যা ফসলে প্রয়োগকৃত সারের অনেকাংশই শুষে নেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই সার প্রয়োগের পূর্বে আগাছা দমনও জরুরি, কিন্তু আলাদাভাবে আগাছা দমন এবং সার প্রয়োগে সময় ও শ্রম দুটোই অপচয় হয়। সাধারণ ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ১৫-২০ শতাংশ বেশি ফসল পাওয়া যায়। গুটি ইউরিয়া পরিমাণে শতকরা ৩০ শতাংশ কম লাগে।

মৌসুমে একবার গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলেই হয়। তাই এর জন্য এমন যন্ত্র প্রয়োজন যা একই সাথে দুটো কাজই সহজে, স্বল্প সময়ে ও অল্প খরচে করতে সক্ষম। তাই অদূরভবিষ্যতে সারের অপচয় কমাতে উইডার-কাম-গুটি-ইউরিয়া এপিকেটর ব্যবহারের বিকল্প নেই।বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্রে এখন আধুনিক কৃষি ও খামার ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

কৃষি যন্ত্রপাতিতে এখন সংযোজিত হচ্ছে মনিটরিং ও পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন ধরনের সেন্সর প্রযুক্তি।পাশাপাশি মাটিস্থ পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ জানা,জমিতে প্রয়োজনীয় পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পোকামাকড় ও বালাই ব্যবস্থাপনা, সার ও কীটনাশকের প্রয়োজনীয় ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে জিপিএস ও জিআইএস ট্র্যাকিং পদ্ধতির বদৌলতে।

কৃষক এখন ঘরে বসেই জানতে পারছে কখন মাঠের কোন অংশে সেচ দরকার, কোন উদ্ভিদে পোকার আক্রমণ ঘটেছে, কোন ফলটি উত্তোলন উপযোগী, কোন গাভী কতটুকু দুধ দিচ্ছে, কখন দিতে হবে মাছকে খাবার ইত্যাদিসহ নানা তথ্য। মোবাইল ফোনে অ্যাপের ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকের কাজ হয়েছে আরো সহজ। যন্ত্রে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে দিলে যন্ত্র নিজেই ভূমি কর্ষণ করে দিচ্ছে পর্যাপ্ত গভীরতায়, গাছ লাগানো হচ্ছে নির্দিষ্ট দূরত্বে,

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে যন্ত্র গাছ থেকে ছিঁড়ে আনছে ফল, রেখে দিচ্ছে সঠিক জায়গায়, আক্রান্ত ফসল তুলে ফেলে দিচ্ছে বাইরে। বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষি বিপণনের জন্য এসব প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার।কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে একসূত্রে বেঁধে সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এতে একদিকে কৃষি শ্রমিক সংকট যেমন কমানো যাবে,

তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এতে কৃষিকাজে যুক্ত হবে শিক্ষিত তরুণেরা এবং বৃদ্ধি পাবে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা। তবুও বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত, প্রক্রিয়াজাত এবং মত্স্য ও পশুসম্পদ খামারের আরো আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজন বহির্বিশ্বের সাথে প্রযুক্তিগত ওপ্রয়োগগত দিক থেকে তাল মিলিয়ে চলা। তাহলে কৃষি খাত দেশের জিডিপিতে রাখতে পারবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *