হিফজখানাগুলোতে শি’শু নি’র্যাত’নে’র ইতিহাস এদেশে অনেক পু’রাতন। আধুনিককালে প্রায়শই নি’র্যা’ত’নে’র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়।(ভিডিওটি দেখতে নিচের ছবির উপর ক্লিক করুন)
সম্প্রতি যে ভিডিওটি ভা’ই’রাল হয়েছে সেটা দেখে রীতিমত সবাই আ’ত’কে উঠেছে। চো’র ডা’কাত’কেও তো মানুষ এভাবে পে’টায় না। আমা’র প্রশ্ন হচ্ছে এই নি’র্দয় শিক্ষক কি কোন ভু’ল করলে তার নিজ সন্তানকেও বাসায় এভাবেই পে’টায়?
একজন হাফেজে কুরআন শিক্ষক কিভাবে এতটা হিং’স্র, পা’শবি’ক এবং অ’মান’বিক হতে পারে?
কুরআনকে শুধু হিফজ করে বুকে ধারণ করলেই আলোকিত মানুষ হওয়া যায় না। কুরআনের প্রকৃত ম’র্মা’র্থ অনুধাবন করতে
হয়, কুরআনের রঙ্গে রংঙ্গীন হতে হয় এবং কুরআনের অমিয় শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করতে জানতে হয়, তাহলেই একজন মানুষ আলোকিত মানুষ হয়ে উঠে। আসলে এরা সুযোগের অভাবে সৎ।
বড় কোন দায়িত্ব পেলে নিশ্চিত এরা সেখানেও এরকম হিং’স্র তান্ড’ব চালাতো। তাই,
সময় এসেছে ধ’র্মীয় শিক্ষার নামে এসব অ’মানবিক নি”র্যা’ত’নের বি’রু’দ্ধে আ’ওয়া’জ তোলার। নিজ নিজ এলাকার হিফজখানাগুলোর খোঁ’জ নিন। নি’র্যা’ত’নে’র অ’ভিযো’গ পেলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। এদেরকে বি’চারের আওতায় আনুন।
.প্রতিটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বাধ্যতামূলক সি সি ক্যামেরা থাকা চাই। সি সি ক্যামেরা না থাকলে ঐ হিফজখানায় আপনার আদরের সন্তানদের ভর্তি করাবেন না। পাশাপাশি, যারা তাদের সন্তানদের হিফজখানা অথবা কোন মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে রেখে
পড়াচ্ছেন তারা শীঘ্রই সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলাপ করুন এবং নিশ্চিত হোন যে তারা কোনভাবে শা’রিরী’ক, মা’নসি’ক অথবা যৌ’’ন নি’র্যা’ত’নে’র শি’কা’র হচ্ছে কিনা।
ইস’লাম আমাদেরকে কুরআনুল কারীম হিফজ করতে উৎসাহিত করেছে কিন্তু
বাধ্য’তামূলকভাবে সবাইকে পুরো কুরআনের হাফেজ হতে নির্দেশ করেনি। আর এটা সম্ভবও নয়। যাকে দিয়ে যেটা হবেনা, তাকে দিয়ে জো’র করে সেটা করানোর চেষ্টা করা— বো’কা’মি আর সময় ন’স্ট করা ছাড়া কিছুই নয়।
কুরআন সহীহ শু’দ্ধ ভাবে পড়তে পারা, নিয়মিত তিলাওয়াত ও কুরআন বুঝাটা হল আবশ্যক। ত্রিশ পারা কুরআনের হাফেজ তো আর সবাই হতে পারবে না। তবে, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মেধা ও তাওফিক দিয়েছেন তাদের উচিত এই মহারত্নকে হৃদয়ে গে’থে রাখার প্রানান্তকর চে’ষ্টা চা’লিয়ে যাওয়া।
কারণ এ যে পরম সৌভাগ্যের বিষয় যা সবার নসিবে থাকেনা। ফুলটাইম হিফজের পাশাপাশি এদেশে পার্টটাইম তাহফিজ সেন্টারেরও খুব দরকার। যারা পুরো কুরআন হিফজ করতে পারবে না তারা পাঁচ পারা, দশ পারা কিংবা পনেরো পারা হিফজ করবে। এতে ল’জ্জার কিছু নেই। আরব বিশ্বে এই সুন্দর প্রচলনটি রয়েছে। অর্থাৎ তারা প্রায় সবাই কুরআনের কিছু না কিছু হিফজ করে থাকে। যাদের মেধা ভালো তারা পুরো কুরআন আর অন্যান্যরা তাদের সাধ্যমত। এটাই বাস্তবতা।
এখানে তো জো’রাজো’রি কিংবা মা’রামা’রির কিছু নেই। একজন শিক্ষক তার ছাত্রদেরকে প্রয়োজনে অবশ্যই শাসন করতে পারে। কিন্তু এভাবে পি’টি’য়ে শ’রী’রে দা’’গ করে ফে’লা, হাতে পায়ে শি’ক’ল বে’ধে রা’খা এবং ইচ্ছা বা সা’ধ্যের বাইরে অ’ভিবাবক কতৃক অনবরত সন্তানদের চা’প প্রয়োগ করা— এসবের কোনটাই ইস’লাম সম্মত নয়। এতে শি’শুর স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষ’তিগ্র’স্ত হয়।
উন্নত দেশে চাইলেই যে কেউ শিক্ষক হতে পারে না। শিক্ষক হতে হলে নূন্যতম একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বিশেষ করে, ব’দমে’জাজী লোক হলে তো শুরুতেই শি’শুদের জন্য শিক্ষক বাছাইয়ে সে ডিসকোয়ালিফাইড। শি’শুদেরকে পড়াতে হলে, প্রচন্ড ধৈর্য্যশক্তি এবং যথেস্ট সেন্স অব হিউম’র থাকতে হয়।
মিশরে অধ্যয়নকালে বিশ্ববিখ্যাত প্রশিক্ষক ড. হুসনি আব্দুর রহিম ক্বিনদিলের সুপারভিশনে “আদর্শ পাঠদান পদ্ধতি” এর উপর ৫০ ঘন্টার একটি কোর্স করেছিলাম। সেখানে তিনি যেকোন পরিস্থিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘা’ত করতে সর্বাবস্থায় নি’ষেধ করেছেন। ওনার মতে, ক্লা’শে বে’ত রাখা যাবে কিন্তু ছাত্রদের উপর প্রয়োগ করা যাবে না বরং অন্যান্য উপায়ে তাদেরকে শা’সন করতে হবে। আসলে শাসনের যথাযথ পদ্ধতি জানা থাকলে, বে’ত ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনা।
.আমাদের দেশে যে কোন উপলক্ষ্যে মাদ্রাসা কিংবা স্কুলগুলোতে বাৎসরিক ছুটি দিলে স্বভাবতই শিক্ষার্থীরা খুব খুশী হয় কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে স্কুল বন্ধ দিলে শি’শুরা কা’ন্না করে। কারণ তারা বাসার চেয়ে স্কুলকে বেশী ইনজয় করে। ছুটির দিনগুলোতে তারা তাদের সুন্দর ক্লাসরুম, ক্লা’শমেইট এবং প্রিয় শিক্ষকদের খুব মিস করে।
মনে আনন্দ নিয়ে বাচ্চারা যেটা শিখে, সেটাই তারা দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারে। আমাদের সোনামণিরা মনের আনন্দে, হেসে, খেলে যেন সব শিখতে পারে, সেটার প্রতি আমাদের সবার লক্ষ্য রাখা উচিত। আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে ওরা যা শিখবে, সেটাই হল আসল শিক্ষা। এতে করে শৈশবের এই মূহুর্তগুলো ওদের জীবনে সুন্দর স্মৃ’তি হয়ে থাকবে।
মানুষ স্বভাবতই তার অ’তীতকে ফিরে দেখতে ও স্মৃ’তিচারণ করতে পছন্দ করে। তার শৈশবের সকল নস্টালজিয়া বা অ’তীতবিধুরতার কল্পনায় আবেগাপ্লুত হয়। কিন্তু এভাবে অ’মানবিক নি’র্যা’ত’নের মধ্য দিয়ে যদি কোন শি’শু বড় হয়, তাহলে সেটা সে সহ’জে ভুলতে পারে না। ফলে, এটা তার চিন্তাপ্রক্রিয়া ও বেড়ে ওঠায় মা’রা’ত্ম’ক নে’তিবা’চক প্র’ভাব ফেলতে পারে।
যেটার বি’রু’প প্রতিক্রিয়া তার পুরো জীবনটাকেই ধ্বং”স করে দিতে পারে। ন’ষ্ট করে দিতে পারে তার আগামীর উ’জ্জ্বল ভবিষ্যত। তাই, মনে রাখবেন— জো’র করে কিছু শেখা’নোর নাম শিক্ষা নয়, শিক্ষা হল আপনার সন্তানের সত:স্ফুর্ত আত্মবিকাশ।