নিজস্ব প্রতিবেদন:নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এটা এমন এক বৃক্ষ যার প্রতিটি অঙ্গ জনজীবনে কোনো না কোনোভাবে কাজে আসে। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড, শিকড় সব কিছুই বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পের কাঁচা মাল,
হরেকরকম মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরির উপকরণ, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, সুস্বাদু পানীয়, রোগীর পথ্য এসব গুণে গুণাম্বিত এটি পৃথিবীর অপূর্ব গাছ, তথা ‘স্বর্গীয় গাছ’ হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ও সুপরিচিত।উৎপত্তিস্থান ও বিস্তার :নারিকেলের আদিস্থান প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ।
এসব স্থান থেকেই পরবর্তীতে শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া গিনি, ওশেনিয়া, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, ঘানাসহ পৃথিবীর প্রায় ৯৩টা দেশে এর বিস্তার ঘটে। পুষ্টিমান ও গুণাগুণ : ডাব ও নারিকেলের সব অংশই আহার উপযোগী,
শাঁস অতি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণ চর্বি, আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনস ও খনিজ লবণে ভরপুর। এতগুলো খাদ্য উপাদান একত্রে কোনো ফলে প্রাপ্তি একটা বিরল দৃষ্টান্ত। কিছু অসুখে ডাবের পানি রোগীদের অন্যতম পথ্য।জাত:পূর্বে নারিকেল চাষ সম্প্রসারণে মাতৃগাছ নির্বাচন করে সেগুলো থেকে উন্নত জাতগুলোর (Open pollinated) বিস্তার ঘটানো হতো।
পরবর্তীতে নারিকেল চাষে অগ্রগামী দেশগুলো (শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, পাপুয়ানিউগিনি)সঙ্করায়ণ/ক্রসিংয়ের (Hybridization) মাধ্যমে উন্নত জাত সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করে।বারী উদ্ভাবিত নারিকেল : বারী নারিকেল-১ এবং বারী নারিকেল-২ নামে তারা দুটা নারিকেলের জাত অবমুক্ত করেছে।
জাত দুটাই ওপি (Open pollinated) লম্বা জাত (D×T) । এ জাত দুটো উপকূলীয় এলাকার ভেতরের অংশে সম্প্রসারণ যোগ্য।গোত্র ও গাছের বিবরণ : নারিকেল, পাম (Palmae) পরিবারভুক্ত। তাল, খেজুর, সুপারি, পামঅয়েল, এগুলো সবই এ গোত্রীয়। এর রোপণ, পরিচর্যা, খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর মিল।
নারিকেলের বৈজ্ঞানিক নাম Cocos nucifera এ পরিবারভুক্ত গাছের ডাল, শাখা, প্রশাখা নেই।জলবায়ু ও মাটি : ট্রপিক্যাল ও সাব ট্রপিক্যাল অংশে অবস্থিত দেশগুলোতে মূলত নারিকেল ভালো জন্মে।এ গাছের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া অতি উপযোগী। নারিকেলের জন্য বার্ষিক গড় ২৭০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি উপযোগী।
তবে দিবা-রাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্য ৬-৭০ সেলসিয়াস হলে নারিকেল গাছের জন্য ভালো হয়। বছরে কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলো তা বড় কথা নয়, সারা বছর ধরে কিছু না কিছু বৃষ্টির পানি নারিকেল গাছ পেল তা-ই আসল কথা। মাটি : নারিকেল যে কোনো ধরনের মাটিতে ফলানো যায়।
শিলা, কাঁকরময়, লাভা, পিট, বালুময় স্থানেও বিশেষ ব্যবস্থায় নারিকেল চাষ উপযোগী করতে তেমন অসুবিধা নেই।বংশবিস্তার : বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে সব ধরনের পাম বৃক্ষের বংশবিস্তার করা হয়। তবে টিস্যু কালচার করেও একেক দফায় নারিকেলের কোটি কোটি চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
চারা উৎপাদন পদ্ধতি : নারিকেল চারা তৈরির জন্য যেখান সেখান থেকে বীজ নারিকেল সংগ্রহ করা উচিত হবে না। অজানা উৎস থেকে সংগৃহীত নারিকেল বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় গাছ থেকে যে ডাব/নারিকেলের ফলন হবে তা নিম্ন মানের।সর্বোপরি গাছে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব দেখা দিলে, বিশেষ করে পটাশ,
বোরন ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি ও অন্যান্য অনু খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিলে বয়স্ক গাছে ফল ধরার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এত গুণে গুণান্বিত এ উপকারী বৃক্ষ সম্প্রসারণে সবাই এগিয়ে আসবেন এবং আগে রোপিত গাছকে পরিচর্যা ও নিয়মিত খাবার পরিবেশন করে সুফল ভোগ করুন এটাই কাম্য।