নিজস্ব প্রতিবেদন: গরমে ডাবের চাহিদা বাড়ে। এবার ভোট-বাজারে সেই চাহিদা চরমে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলে যাঁদের বাড়িতে নারকেল গাছে আছে, কাঁদি-কাঁদি ডাব নামিয়েও সঙ্কুলান করে উঠতে পারছেন না। তারই মধ্যে কোনও ডাব হয়তো কেটে দেখা যাচ্ছে জল নেই ভেতরে। কারও বাড়িতে ডাবের গড়ন আঁকাবাকা, গায়ে কালো দাগ। কারও আবার বাড়ির গাছে ডাবই হচ্ছে না কিছুতে।
সব মিলিয়ে নারকেল গাছ নিয়ে প্রচুর অভাব-অভিযোগ। এর মূল কারণ হল, বাড়ির উঠোনে লাগানো নারকেল গাছে সার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না কেউ। নারকেল গাছের রোগপোকা নিয়েও সাধারণ লোকজনের খুব একটা ধারণা নেই। অথচ, একটু পরিচর্যা নিলে আপনার নারকেল গাছেও প্রচুর ফল ধরবে, জল হবে ভাল, শাঁস মোটা।রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া চাই। আর পর্যাপ্ত বৃষ্টি।
গরমকালে নিয়মিত জল দিতে হবে গাছে। জলসেচের ভাল ব্যবস্থা থাকলে শুকনো এলাকাতেও চাষ করা যায়। নিকাশি ব্যবস্থা থাকতে হবে। বেলে-দোঁয়াশ ও এঁটেল দোঁয়াশ মাটি উপযুক্ত। উপকূলের জেলা ও উত্তরবঙ্গে ভাল নারকেল হয়।বিশ্বস্ত নার্শারি থেকে ভাল জাতের রোগমুক্ত সুস্থ চারা (যার অন্তত ছ’টি পাতা, গোড়ার বেড় ১০ সেমির বেশি) কিনে আনতে হবে।
নিজের বাড়িতে বা পাড়া-পড়শির ভাল জাতের গাছ থাকলে (মাঝারি বয়স, মাথা গোলাকার, প্রচুর পাতা, রোগমুক্ত, ফলের শাঁস পুরু ও মিষ্টি) তার পুষ্ট নারকেল পেড়ে চারা বানিয়ে নেওয়া যায়। যদিও টিস্যু কালচার ছাড়া অবিকল চারা পাওয়া সম্ভব নয়।চারা বানানোর জন্য এই সময়টাই সবচেয়ে ভাল। মা-গাছের পরিপক্ক নারকেল পেড়ে রোদে শুকিয়ে নিন।
সেটা দু’তিন দিন জলে ভিজিয়ে রেখে একটা স্যাঁতসেঁতে ঘরে বা ছায়াযুক্ত জায়গায় ভেজা খড় বা তুষের উপরে রেখে দিন। মাঝে-মধ্যে একটু জল ছিটিয়ে দিতে হবে (পিঁপড়ে ও উইপোকা আটকাতে ক্লোরপাইরিফস ২-৩ মিলি/লিটার জলে গুলে ছেটানো যায়)। এক মাসের মধ্যেই কল বেরিয়ে যাবে। মাস দু’য়েকের মধ্যে এক হাতের মতো হলে চারা রোপণ করা যাবে।নার্শারি থেকে আনা হোক বা নিজের তৈরি—বর্ষার শুরুতে চারা লাগালে ভাল।
নিচু জায়গা হলে বর্ষার পরে। মাসখানেক আগে নির্দিষ্ট জায়গায় তিন ফুটের গর্ত করে নারকেল ছোবড়া, গোবর সার, নিমখোল, ৫০০ গ্রাম ১০:২৬:২৬ এবং ১৫ গ্রাম কার্বোফিউরন ৩ জি প্রয়োগ করে রোদ খাওয়ান মাটি। চারা বসানোর সময়ে সোজা করে গোড়ায় মাটি ধরাতে হবে। চারার তলার নারকেলের ছোবড়া অক্ষত থাকলে ভাল। এমন ভাবে বসাবেন, যাতে নারকেলের চার ভাগের এক ভাগ উপরে থাকে। তাতে শিকড় ছড়াতে পারবে।
৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড দ্রবণে গোড়া ভিজিয়ে দিন।নাইট্রোজেন, ফসফরাস ছাড়া নারকেলে পটাশ সার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর অবশ্যই অণুখাদ্য। তবে নারকেল গাছে সার দেওয়ার জন্য রিং কাটার সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এদের শিকড় মাটির উপরিভাগে ছড়িয়ে থাকে। রিং কাটতে গিয়ে শিকড় কেটে গেলে মুশকিল। তাই গাছের গোড়া থেকে দু’ফুট ব্যাসার্ধ ছেড়ে দু’ফুট চওড়া রিং কাটতে হবে।
কোপানোর সময় গাছের দিকে মুখ না করে গাছ বাঁ দিকে বা ডান দিকে রেখে মাটি কোপান। পূর্ণবয়স্ক, ফলন্ত গাছে বছরে ৫০ কেজি ভাল পচানো গোবর সার, ৩ কেজি খোল, ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩ কেজি ১২৫ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ২ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ, ৪ কেজি জিপসাম (নারকেলের মালার জন্য), ১০০ গ্রাম জিঙ্ক, ৫০ গ্রাম বোরন, ২০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম মলিবডেট লাগে। এটা দু’ভাগে ভাগ করে বর্ষার আগে ও পরে রিং কাটা অংশে
ভাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। চার ফুটের ব্যাসে একটা বাঁধ টেনে রাখলে জল ও সার ধুয়ে যাবে না। চারা গাছে এই সারের পরিমাণ ছ’ভাগের এক ভাগ। তার দু’ ভাগ করে বর্ষার আগে ও পরে।বর্ষার আগে প্রতি বছর ১৬-২৪টা পাতা রেখে বাকি সব নীচ থেকে কেটে পরিষ্কার করে দিতে হবে। যত পরিচ্ছন্ন থাকবে তত রোগপোকা বা অন্য উৎপাত কম হবে। গাছে ফুল আসার এক বছর পর নারকেল পাড়া যাবে। ডাবের জন্য ৬-৭ মাস যথেষ্ট।