অভিনব পদ্ধতিতে বোতল দিয়ে ফাদ পেতে শালিক কে বোকা বানিয়ে যুবকের ছলনাময় ডাকে সাড়া দিতে এসে বন্দি শালিক। পাখি ধরার এমন অভিনব পদ্ধতি তুমুল ভাইরাল নেটদুনিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদন:শালিকপাখি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। শালিকপাখি প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে 6টির অধিক ক্ষতিকারক শালিকপাখি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে।প্রতিনিয়ত শালিকপাখি আমাদের উৎপাদিত ফসলকে নষ্ট করছে।

ক্রমবর্ধমান হারে খাদ্যের প্রয়োজনে দেশে বর্তমানে এক ফসলের পরিবর্তে বহুবিধ ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর ফলে শালিকপাখি মাঠেই খাদ্য পাচ্ছে। বাংলাদেশে শালিকপাখির আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে।আবহমান বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ঐতিহ্য মিশে আছে কৃষির সঙ্গে।

প্রাচীনকাল থেকে আমাদের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান অসামান্য। এদেশের কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ কৃষি খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য এবং রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা সমুজ্জল।উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রোগ-বালাই ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনিষ্টকারী মেরুদ-ী প্রাণী দমন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শালিকপাখিএক বড় সমস্যা। মাঠের শস্য কেটে কুটে নষ্ট করে, খায় এবং গর্তে জমা করে।গুদামজাত শস্যে মলমূত্র ও লোমের সংমিশ্রণ করে, মানুষ ও গবাদি পশুদের মধ্যে রোগ-বালাই সংক্রমণ করে, সর্বোপরি পরিবেশ দূষিত করে। সরকারি বেসরকারি খাদ্য গুদাম,

বেকারি, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানে বিপুল পরিমাণে খাদ্য শালিকপাখির নষ্ট করে যার প্রকৃত কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিষয়ক সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গঙ্গা- ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকা বিশ্বের অন্যতম শালিকপাখি উপদ্রুত এবং বংশবিস্তারকারী এলাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণের এলাকাগুলো শালিকপাখির বংশবিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল।

মাঠের ফসল ছাড়াও এই অববাহিকায় অবস্থিত হাট বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও শালিকপাখির দাপট বেশি।আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (IRRI) শালিকপাখি উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১১টি দেশকে চিহ্নিত করেছে। ইরির হিসেবে, ফসলের মোট ক্ষতির বিবেচনায় কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ফিলিপাইন। দেশটির উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ শালিকপাখির খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।

এর পরেই আছে লাওস নামক দেশটি।দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ধান শালিকপাখির পেটে যায়। ইরির এক গবেষণায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান- গম শালিকপাখির খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মঙ্গলবার, ১৬জুন/২০১৫)। বাংলাদেশে শালিকপাখির কারণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ফসলে ৪-১২ ভাগ, গোল আলুতে ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট হয়।

গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ % এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫% ক্ষতি করে। ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় শালিকপাখির বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে শালিকপাখির ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। ১৭০০টি শালিকপাখির জাতীয় প্রাণীর মধ্যে বাংলাদেশে ১২টির অধিক ক্ষতিকারক শালিকপাখির জাতীয় প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রজাতিভেদে এদের ওজন ৭০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। শালিকপাখি আকারে ছোট হলেও সারা বছরে সব ধরনের ক্ষতি মিলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে।শালিকপাখি বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গর্ত করে এবং মাটি সরিয়ে বাঁধ দুর্বল করে ফেলে যার কারণে বাঁধ ভেঙে পানি দ্বারা প্লাবিত হয়ে বাড়ি ঘর, ফসলাদি ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়ে থাকে।

শালিকপাখি মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট করা ছাড়া বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটেও নষ্ট করে। এদের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগত ভাবে নির্ণয় করা স্বভাবতই কঠিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *