নিজস্ব প্রতিবেদন: কালো ভালুক বা এশীয় কালো ভাল্লুক এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। এই ভাল্লুকের আকার মাঝারি। এই ভাল্লুকের গলায় সাদা V আকারের দাগ আছে। এই ভাল্লুক Moon bear নামেও পরিচিত। এই ভাল্লুক বিভিন্ন প্রকার।এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের ভাল্লুকের প্রজাতি আলাদা।
অবস্থা:আইইউসিএন প্রধানত বনায়ন ধ্বংস এবং এদের দেহখণ্ডের জন্য শিকারের কারণে এদেরকে সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশে কালো ভাল্লুক মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত।ভাল্লুক শ্বাপদ বর্গের (order carnivora) স্তন্যপায়ী প্রাণী।পৃথিবিতে আট রকম প্রজাতির ভাল্লুক পাওয়া যায়। সাধারনত ভালুকের চেহারা ভারী এবং পা ছোট আর মোটা হয়।
ভালুকের মুখ লম্বাটে, গায়ে বড় বড় লোম।ভালুকের থাবায় পাঁচটি আঙ্গুল আর আঙ্গুলে নখ থাকে ।সব ভাল্লুকের গায়ের রঙ একরকম নয়। যেমন, আমেরিকান কৃষ্ণ ভাল্লুকের গায়ের রঙ কালো, বাদামি, নীলাভ কালো ইত্যাদি হয়ে থাকে।বাংলাদেশে যে দুটি প্রজাতির ভাল্লুক পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি কালো ভাল্লুক। এ ভাল্লুকটিও আমাদের দেশে খুব বিড়ল। খুব কম এদের খবর মেলে।
বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চলে এদের বাস।মাঝারী লোমের কালো কুচকুচে মসৃণ দেহ, মজবুত শরীর, বুকে সাদা ভি আকৃতির চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যায়। কান অন্য ভাল্লুকের তুলনায় বড়। নিচের ঠোঁট সাদাটে। দেহের আকার মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৯৫ সেমি ।কাঁধের উচ্চতা ৭০ থেকে ১০০ সেমি। লেজ খুব ছোট ১১ সেমি। পুরুষের ওজন ৯১ থেকে ১৫০ কেজি এবং স্ত্রী ভাল্লুকের ওজন ৬৫ থেকে ৯০ কেজি।
মা ও শাবক ছাড়া বাকি সব ভালুকই একা বাস করে। তবে মাঝে মাঝে তারা দল বেঁধে খাবার খোঁজে। খাবারের খোঁজে এরা বিশাল এলাকা ঘুরে বেড়ায়। ভালুক তার খাবার সংগ্রহের পথ মনে রাখেতে পারে। অধিকাংশ ভালুকই গাছে চড়তে পারে। তাদের শক্তিশালী থাবা ও ধারালো নখ এ কাজে সাহায্য করে। সাধারনত বাংলাদেশের পাহাড়ীবনে যে দুটি ভাল্লুক আছে তাদের স্বভাব প্রায় একরকম।
কালো ভাল্লুক দিন রাত সমান সক্রিয়। এরা জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি বনে, সমতল বনে থাকতে পছন্দ করে। কালো ভাল্লুক পাহাড়ে এবং গাছে উঠতে দক্ষ। এরা একা থাকে। কালো ভাল্লুক বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ,ফলমূল, মধু খায়।ঝগড়া করার সময় ভালুক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য দুই পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। কালো ভাল্লুক সাধারণত মানুষকে খাবারের উদ্দেশে আক্রমণ করে না।
ভয়পেয়ে বা নিজের বা বাচ্চার (Asian black bear)নিরাপত্তার কারনে মানুষকে আক্রমণ করে থাকে।এরা লোকালয়ে আসেনা, গভিরবনে থাকতে পছন্দ করে।বাসস্থান ধ্বংস, চামরা, লোম ,পিত্ত থলি, দাঁত, নখের জন্য শিকারের কারণে কালো ভাল্লুক বাংলাদেশর বন থেকে বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে। দ্রুত এদের সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ থেকে চির বিদায় নিবে সুন্দর এই প্রাণীটি।
কালো ভাল্লুক(Asian black bear) সংকটাপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে।বাংলাদেশে কালো ভাল্লুক মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত এবং ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।শংস্লিষ্ট দপ্তর গুলোর উদাসিনতায় একসময় বাংলাদেশের বন থেকে এ প্রনিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের পাহাড়ি বনে কত টি কালো ভাল্লুক(Asian black bear)বেঁচে আছে এমন তথ্য কারো জানা নেই। প্রয়োজনে শংস্লিষ্ট দপ্তর গুলো ভাল্লুকশুমারী করে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে, প্রনিটির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তায় যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। মহাবিপন্ন প্রজাতিটির আস্তিত্ব রক্ষার সার্থে।